এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঠেকাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন তিন শ্রমিক। সড়ক বিভাজক যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে একটি ম্যানিকুইন দাঁড় করিয়ে দেন তাঁরা। কমিউনিটি পুলিশের পরা পোশাকের ধাঁচের মতো পোশাক পরানো হয় ম্যানিকুইনটিকে। ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, এরপর গত ২০ দিনে সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখাইরুল ইসলাম বলেন, ম্যানিকুইনটি নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে।
২০ টাকায় কিনেছিলেন ম্যানিকুইনটি
ওই তিন শ্রমিকের নাম মো. বাবুল, মো. শামসু ও মো. মানিক। তাঁরা সিন্নিরটেকের পাশে একটি ঝুটের গুদামে কাজ করেন। গত বুধবার দুপুরে সিন্নিরটেকে বাবুলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
বাবুল প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ২০ দিন আগে বালুবাহী একটি ট্রাক সড়ক বিভাজকের মাথায় ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। উত্তরার দিক থেকে আসা ট্রাকটি সড়ক বিভাজকে উঠে গিয়েছিল। এ দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি চায়ের দোকানে বসে শামসু ও মানিকের সঙ্গে তিনি আলোচনা করছিলেন। তখন ভাঙারির মালামাল সংগ্রহকারী এক ব্যক্তিকে একটি ম্যানিকুইন নিয়ে যেতেদেখেন।
বাবুল বলেন, সেটি দেখেই মাথায় আসে কমিউনিটি পুলিশের মতো পোশাক পরিয়ে বিভাজকের শেষ অংশে সেটি বসালে হয়তো দুর্ঘটনা আর ঘটবে না। তখন ২০ টাকা দিয়ে ম্যানিকুইনটি কেনা হয়। তারপর ঝুটের গুদাম থেকেই খুঁজে বের করা হয় পোশাক।
শামীম মিয়ার চায়ের দোকানে বসে বাবুলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। শামীম বলেন, এখানে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রাক ও মোটরসাইকেল। মাসে ১০ থেকে ১২টি দুর্ঘটনা ঘটে। বিভাজকের অস্তিত্ব বোঝাতে বাঁশ ও কাঠ স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয়নি।
শামীম বলেন, ম্যানিকুইনটি বসানোর পর দুর্ঘটনা আর ঘটছে না। এটি দেখেই গতিনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চালকেরা বুঝতে পারছেন, সেখানে বিভাজক আছে।
দারুস সালাম ট্রাফিক অঞ্চলের সহকারী কমিশনার ইফতেখাইরুল ইসলামও একই কথা জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কে বা কারা ম্যানিকুইনটি বসিয়েছে, সেটি তাঁর জানা নেই। তবে এটি বসানোর পর আর দুর্ঘটনার খবর তিনি পাননি।
স্থায়ী সমাধান কী
ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সিন্নিরটেক মোড় থেকে ধউরের দিকে যেতে সড়কটি একটু ঢালু। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে হঠাৎ একটু ওপরের দিকে উঠতে হয়। সেখানেই সড়ক বিভাজকের কিছু অংশ রয়েছে। এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন না—এমন চালকেরা অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এ সমস্যার কথা সিটি করপোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান ইফতেখাইরুল। তিনি বলেন, পুরো রাস্তাই সংস্কার করা হবে বলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ আলী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিষয়টি তিনি জানেন না। তা ছাড়া সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বলেও জানান তিনি। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হলে তাঁরা সেটি করার চেষ্টা করবেন বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটির এই কর্মকর্তা।