ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: করোনাভাইরাস মহামারিতে স্থবির পুরো বিশ্ব। তবে, এর মধ্যেও থেমে নেই মানব জাতির নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী ও পর্যটনবান্ধব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে বিশ্বের উচ্চতম অট্টালিকা ও সর্ববৃহৎ শপিংমলের সঙ্গে আরেকটি নতুন আকর্ষণ যোগ হয়েছে। তার তা হলো—বিশ্বের গভীরতম ‘ডাইভিং’ পুল।
সুইমিং পুলের সঙ্গে ডাইভিং পুলের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ডাইভিং পুলে শুধুমাত্র পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ার, অর্থাৎ ডাইভ করার জন্য একটি আলাদা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।
দুবাইয়ের এই পুলটির গভীরতা ৬০ মিটার (১৯৬ দশমিক ৮৫ ফুট)। এর আগে সবচেয়ে গভীরতম পুল ছিল পোল্যান্ডের ডিপস্পটের কাছে। এর গভীরতা ৪৫ মিটার।
দুবাইয়ের ডিপ ডাইভ পুলে রয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি। এই পরিমাণ পানি দিয়ে ছয়টি অলিম্পিক সুইমিং পুল ভরে ফেলা যাবে। গত ২৭ জুন এটি ‘ডাইভিংয়ের জন্য গভীরতম সুইমিং পুল’ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছে।
পুলটিতে এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র আমন্ত্রণ পেলে প্রবেশ করা যাচ্ছে। তবে, এ বছরের শেষের দিকে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতৌম পুলটি ঘুরে এসেছেন। তিনি একজন প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ডাইভার। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনাসহ একটি ভিডিও তিনি শেয়ার করেছেন তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে।
দ্বীপ রাষ্ট্র দুবাইয়ের সমুদ্র থেকে মুক্তা আহরণের ইতিহাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ইনডোর পুলটিকে একটি এক হাজার ৫০০ বর্গমিটারের ঝিনুক আকৃতির অবকাঠামোর ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে।
ডিপ ডাইভ দুবাইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ সম্ভবত এর পানির নিচে থাকা শহরটি। পুলের তলদেশে ডুবুরীরা একটি ‘পরিত্যক্ত’ ও নিমজ্জিত শহরের অ্যাপার্টমেন্ট দেখতে পাবেন। সেখানে ডুবুরীদের বিনোদনের জন্য ভিডিও গেমস খেলার আর্কেড মেশিন ও পুল খেলার টেবিল রয়েছে। এ ছাড়াও সেখানে একটি ভিন্নধর্মী আবহ তৈরির জন্য অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম বসানো হয়েছে।
পুলটি একইসঙ্গে পানিতে নিমজ্জিত ফিল্ম স্টুডিও হিসেবেও কাজ করতে পারে। এর খুব কাছেই রয়েছে একটি মিডিয়া এডিটিং রুম।
দর্শনার্থীরা চাইলে এখানে ডাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। নতুন ও অভিজ্ঞ, সবার জন্যই রয়েছে প্রশিক্ষণ সুবিধা আছে। এ ছাড়াও ট্যুর গাইডের সহায়তায় পর্যটকরা পুল ও পানিতে নিমজ্জিত শহরটি পরিদর্শন করতে পারবেন।
ডুবুরীদের নিরাপত্তার জন্য পুলটির চারপাশে এবং প্রতিটি কোণায় প্রায় ৫৬টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেখানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে উন্নত হাইপারব্যারিক চেম্বারটি, যার ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ১২ জন রোগী। হাইপারব্যারিক অক্সিজেন থেরাপি হচ্ছে এক ধরণের চিকিৎসা, যা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া ও অক্সিজেনের অভাবজনিত জটিলতাসহ অন্যান্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ডিপ ডাইভ দুবাইয়ের পরিচালক জ্যারড জ্যাবলনস্কি সিএনএনের কাছে দাবী করেন, ‘পৃথিবীতে অনেক ডাইভ পুল আছে যেগুলো অনেক গভীর, কিন্তু এর মতো আকর্ষণীয় আর কোনটিই নয়।’
ডাইভিং কমপ্লেক্সটিতে বড় বড় জানালা ও টিভি স্ক্রিনসহ একটি রেস্তোরাঁ আছে, যেখান একটি আরামদায়ক পরিবেশে বসে ডুবুরীদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা তাদেরকে দেখতে পারেন।