উৎসব-পার্বণ

দুই বাংলার ‘দেশভাগ’ থিমে এবারের দূর্গাপূজায় ‘ভাগের মা’  

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: কলকাতায় এবার দুর্গাপূজায় থিম বা ভাবনার লড়াইয়ে এতটুকু কমতি নেই। সাম্প্রতিক ইস্যুকে ঘিরে সাজানো হয়েছে পূজা মণ্ডপ। তবে কেউ কেউ সেই থিমে নিয়ে এসেছেন ভিন্নতা। পূজা মণ্ডপ নির্মাণে নিয়ে এসেছেন নতুন ভাবনার ছাপ। এক ভিন্ন থিম ‘ভাগের মা’ নিয়ে পূজা মণ্ডপ সাজিয়েছে বড়িশা ক্লাব। গতবার এই ক্লাব পরিযায়ী মায়ের ভাবনা ফুটিয়ে তুলে ভাইরাল হয়েছিল।

কলকাতার বড়িশা ক্লাবে ‘ভাগের মা’ ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী রিন্টু দাশ। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের

এবারের ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‌’৪৭-এর দেশ ভাগের সময় বাক্স-প্যাটরা সন্তানদের নিয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গ চলে এসেছিলেন মায়েরা। তাদের চোখে-মুখে ছিল একরাশ হতাশা, উদ্বাস্তু হওয়ার বেদনা এবং মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা। তারপর স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশব্যাপী আতঙ্ক এবং অস্থিরতা। এবারেও ছিন্নমূল এবং উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করেছে আমাদের মনে। ঠিক মতো নথি-কাগজ না দেখালে, এবারেও কি সন্তানদের কোলে নিয়ে আগের মতোই ভিটে-মাটি ছাড়তে হবে মায়েদের? ডিজিটাল ভারতে দাঁড়িয়ে কেন ফের উসকে উঠছে দেশভাগের স্মৃতি? কোথায় যাবেন তাহলে মায়েরা? মায়ের ভাগ তাহলে কার থাকবে? পূর্ববঙ্গের না পশ্চিমবঙ্গের? না উদ্বাস্তু জীবনই ভবিতব্য।’

এই ভাবনার রূপায়ন এবার বড়িশা ক্লাবের ‘ভাগের মা’। এই থিমের পিছনে একটি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ আছে, যা জুড়েছে রাজা বল্লাল সেনের রাজত্বকে। সেই ইতিহাস প্রসঙ্গে পূজা কমিটির সদস্য সপ্তর্ষি জানা বলেন, ‘সময়টা ১২০০ সাল। বাংলার সিংহাসনে তখন ধর্মপ্রাণ রাজা বল্লাল সেন। তিনি এক রাতে মহিষমর্দিনী দশভূজার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নের আদেশ মতো ঢাকার (অধুনা বাংলাদেশ) নিকটবর্তী এক জঙ্গল থেকে দেবী দশভুজার একটি বিগ্রহ উদ্ধার করেন তিনি। বিগ্রহটি আচ্ছাদিত বা ঢাকা ছিল বলে তিনি এর নামকরণ করেন “ঢাকেশ্বরী” এবং প্রতিষ্ঠা করেন “ঢাকেশ্বরী” মন্দিরের।‘

তিনি বলেন, ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকায় অবস্থিত হলেও দেবী ঢাকেশ্বরীর আদি বিগ্রহটি এখন কলকাতার কুমোরটুলির অঞ্চলে দুর্গাচরণ স্ট্রিটে ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় অন্য সবকিছুর সঙ্গে মায়ের আদি বিগ্রহটি চলে আসে এখানে। কয়েকলক্ষ মানুষের সঙ্গে মা-ও উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসেন কলকাতায়। ‘এত বছর পরেও কেন ভিটে-মাটি হারানোর অতীতের স্মৃতি ঘুরেফিরে আসছে? ফের কি তাহলে উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা? এবার তাহলে কোথায় যাবেন মা? কোন ঠিকানায়? মায়ের ভাগ তাহলে কে পাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এবার বড়িশা ক্লাবের ভাবনায় ‘ভাগের মা।’

আরো পড়ুন:

দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, সার্বজনীন উৎসব : প্রধানমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *