স্বাস্থ্য

দুই কোম্পানির দুই ডোজ করোনা টিকা কি নেয়া যাবে?

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: “করোনার টিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কোভিশিল্ড টিকার চালান আবার কবে আসবে তা নিশ্চিত জানা যায়নি এখনও। অনিশ্চয়তার মধ্যেই রাশিয়ার স্পুটনিক ও চীনের সিনোফার্মাকে টিকার জন্য জরুরি অথোরাইজেশন দেয়া হয়েছে।” ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, “স্পুটনিকের ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে মে মাসেই।”

দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ যতো মানুষ নিয়েছেন তারা সঠিক সময়ে একই টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আবার দ্বিতীয় ডোজের টিকা অন্য কোম্পানির নিলে টিকার কার্যকারিতা থাকবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে অনাস্থা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সবচেয়ে ভালো হয় একই কোম্পানির দুই ডোজ টিকা নিতে পারলে। দুই কোম্পানির দুই ডোজ টিকার সুফল বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনও গবেষণালব্ধ ফল পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও।”

আরোও পড়ুন: ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে আইসিইউর খরচ লাগবে না: মেয়র

দুই কোম্পানির দুই ডোজ দেওয়া যাবে কিনা এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ বললেন, “ভ্যাকসিনের ইতিহাসে এমন ঘটনা দুই-তিনবার ঘটেছে। সরবরাহে সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছিল। এটার পেছনে বৈজ্ঞানিক কোনও যুক্তি নেই।”

অন্য কোম্পানির টিকা নিয়ে যা জানালেন বিশেষজ্ঞরা

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠন (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “এক কোম্পানির টিকাই নিতে হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা আমাদের। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছয় কোটি ডোজ রয়েছে। তারা কোভ্যাক্সে সেটা দেবে। কোভ্যাক্স থেকে আমরা পাবো। আমেরিকা থেকে যদি কম টাকায় নেয়া যায়, সেটাও নিতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “একজন টিকাগ্রহীতা দুই কোম্পানির দুই ডোজ নিতে পারবেন না। কারণ, এর ট্রায়াল এখনও হয়নি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও স্পুটনিকের ফর্মুলা এক হলেও কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।”

আরোও পড়ুন: ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে করুন এই ব্যায়াম

একই প্রশ্নে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, “একেবারেই নেওয়া যাবে না, তা নয়। এ সংক্রান্ত গবেষণার কিছু প্রাথমিক ফল আশাব্যাঞ্জক। আমার মতে, দুটো মিক্স করা যাবে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময় তিন মাসের জায়গায় চার মাস গ্যাপ হলেও আমাদের সাজেশন থাকবে একই কোম্পানির টিকা নেয়া। গ্যাপ আরও বাড়লেও অসুবিধা নেই।” অধ্যাপক লিয়াকত আলী আরও বলেন, “দুই কোম্পানির টিকা নেয়া যাবে, আবার গ্যাপ দিয়ে একই কোম্পানিরটাও নেয়া যাবে।”

মডার্না ও ফাইজারের দুই ডোজ দেয়া যায় কিনা, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা হচ্ছে জানিয়ে ডা. লিয়াকত বলেন, “দুই কোম্পানির দুই ডোজ নিয়ে ট্রায়াল হচ্ছে। ফলাফল এখনও আসেনি। এ নিয়ে কাজ চলছে। তবে দুই কোম্পানির দুই ডোজ মিক্স করলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, এমনও হতে পারে। তবে যেহেতু গবেষণার ফল এখনও চূড়ান্ত নয়, তাই আগের টিকাই নেয়ার কথা বলবো। আমেরিকার কাছে যে ছয় কোটি ডোজ রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার, সেটা পাওয়ার জন্য আমরা সরকারকে লবিং করার অনুরোধ করছি।”

তিনি বলেন, “তবে অন্য জায়গা থেকে আনার চেষ্টাও হচ্ছে। জুনের শেষ নাগাদ হয়তো সেরাম থেকেও কিছু চলে আসবে। সব মিলিয়ে মনে করি না দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পড়বে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু এ সম্পর্কে বলেন, “আমি মনে করি ভ্যাকসিন আসবে। কারণ এখনও প্রায় ২০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার। তাই দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো ভ্যাকসিন তাদের রয়েছে বলে আমি মনে করি।”

ডা. খসরু বলেন, “যদি কোনওভাবেই ভ্যাকসিন না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। ১২ সপ্তাহ পর পাওয়া না গেলে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য ভ্যাকসিন দেয়া হবে। যখন হাতে কিছুই থাকবে না, তখন বিকল্প নিয়ে ভাবা যেতে পারে। সেটা বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করবে।”

লম্বা গ্যাপই ভালো
প্রথম ডোজের পর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের সময় থাকে। আরও কিছুদিন দেরি হলেও অসুবিধা নেই বলে মন্তব্য করেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, “ব্রিটেনে বলা হচ্ছে যত লম্বা গ্যাপ হবে, ততোই ভালো।” একই মত দেন অধ্যাপক লিয়াকত আলীও। তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *