খাদ্য-পুষ্টি

দিনদিন বাড়ছে লাল চালের জনপ্রিয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত ছাড়া কোনো বাঙালির পক্ষে একটা দিন চলাই যেন খুব কঠিন। তবে বর্তমানে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করা সাদা চালে দেখা দিচ্ছে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই অনেক ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদ এখন লাল চাল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। লাল চাল খেতে তেমন সুস্বাদু নয় তবে এর পুষ্টিগুণ সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশি। তাই দিনদিন লাল চালের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

লাল চালে ভিটামিন বি১, বি৩, বি৬ ও ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস প্রভৃতি খনিজ পদার্থ বেশি মাত্রায় থাকে। শরীরের জন্য এগুলো খুব দরকার। অন্যদিকে সাদা চাল তৈরির প্রক্রিয়ায় সময়ই এসব উপাদান অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। আঁশও কমে যায়।

লাল চালে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। উপাদান দুটি একসঙ্গে হাড় ও দাঁত ভালো রাখে। হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ম্যাগনেশিয়াম মাইগ্রেন কমায়, রক্তচাপ কমায় ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।

লাল চালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম উপাদান দুটি একসঙ্গে হাড় ও দাঁত ভালো রাখে। হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

ম্যাগনেশিয়াম মাইগ্রেন কমায়, রক্তচাপ কমায় ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। লাল চালে প্রচুর পরিমাণে থাকা ভিটামিন বি৬ শরীরের প্রয়োজনীয় লোহিত কণিকা ও সেরোটোনিন উৎপাদন করে। এতে বেশি পরিমাণে আয়রন থাকায় খেতে খুব সুস্বাদু না হলেও রক্তাল্পতায় ভোগা মানুষের জন্য লাল চাল ওষুধের মতো কাজ করে। গর্ভবতী ও স্তনদায়ী মায়ের জন্য লাল চাল স্বাস্থ্যকর। এটা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও উপকারী।

লাল চালে প্রচুর অ্যানথোসায়ানিন নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট লাল রঙের ফলমূল ও শাকসবজিতে পাওয়া যায়। অ্যানথোসায়ানিন শরীরে প্রদাহ কমায়। অ্যালার্জি কমায়। ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্যও সাদা চালের চেয়ে লাল চাল ভালো।

লাল চালের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এতে আঁশ থাকে বেশি। আর যেকোনো খাবারে আঁশ থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে কোলেস্টেরল কমে, সাহায্য করে। ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোকে অন্ত্রের কোষের সংস্পর্শে বেশিক্ষণ থাকতে বাঁধা দেয়। এ ছাড়া লাল চাল সেলেনিয়ামের ভালো উৎস। এই খনিজ দ্রব্যের সামান্য  পরিমাণও অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। লাল চালের অ্যানথোসায়ানিন ত্বকের ভাঁজ কমায়, ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় সূর্যের আলোর ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

তবে লাল চালের অনেক উপকারিতা থাকলেও এটা খাওয়ার সময় কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। লাল চালে সমস্যা হতে পারে যদি সেটা আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় উত্পাদিত হয়। ধানগাছ খুব সহজেই মাটি ও পানি থেকে আর্সেনিক শুষে নেয়। এই আর্সেনিক ধানের খোসা ও কুঁড়াতে বেশি থাকে। ধান থেকে খোসা ছাড়ানোর পর তৈরি লাল চালে আর্সেনিক–দূষণের আশঙ্কা বেশি। চাল সাদা করার সময় লাল চালের কয়েক পরত আবরণ উঠে যায়। ফলে আর্সেনিকের মাত্রা সাদা চালে কম। কিছু কিছু গবেষণাতে এটা প্রমাণিত যে, লাল চালে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফাইটিক এসিড আছে যা অন্ত্রে লোহা বা আয়রন ও ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়, ফলে লাল চালের ভাতের সঙ্গে যদি এমন খাবার খাওয়া হয় যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও আয়রন থাকে তবে এ সমস্যা হতে পারে, তাই লাল চালের ভাত খাওয়ার সময় অধিক আয়রন ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।

আমাদের দেশে সাধারণত ৩-৪ ধরনের চালই বেশি উৎপাদিত হলেও সারা পৃথিবীতে মোটামুটি ৪০,০০০ ধরনের ধান বা চাল পাওয়া যায়। বাদামি বা লাল চাল পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম বেশি চাষ করা হয়। তবে লাল চাল প্রধানত ভারত, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে বেশি চাষ করা হয়।

বাংলাদেশে লাল চালের চাহিদা বাড়ার কারণে এখন প্রায় সব সুপারশপ এবং খোলা বাজারেই এই চাল কিনতে পাওয়া যায়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *