মাতৃভূমি

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়কে থাকবে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: রাজধানীর নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান হত্যার প্রতিবাদে এবং গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে গতকাল ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।

গণপরিবহনে হাফ ভাড়াসহ ৯ দফা দাবি পূরণে আগামী সোমবার পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়ে গতকাল শনিবার সড়ক ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দাবি আদায়ের ঘোষণা না এলে সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয় ঘেরাও করবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে আজ রবিবার ও কাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে তারা গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স যাচাইও করবে।

তবে হাফ ভাড়া নিয়ে গতকাল বিআরটিএ ও পরিবহন মালিক সমিতির বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা প্রণোদনাসহ নানা দাবি জানিয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, হাফ ভাড়া করতে হলে বছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়েছেন বেসরকারি বাস মালিকরা। প্রতিবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেটে এই প্রণোদনার টাকা ছাড় করার কথা প্রস্তাব দেন তারা।

বাস মালিকরা বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের হাফ পাস দরকার নেই। কেবল অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা হাফ পাসের সুবিধা পাবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন কার্ড তৈরি করা যেতে পারে। যাদের পরিবহন কার্ড থাকবে, শুধু তারাই বাসে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবে। এই পরিবহন কার্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, বাসে হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন নেতারা আন্তরিক। কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, কতজন বাস ব্যবহার করে—এর একটি পরিসংখ্যান চেয়েছেন নেতারা। সরকার কত ভর্তুকি দেবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও পরিবহনে সম্পৃক্তদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। হাফ ভাড়া নিলে মালিকদের যে ক্ষতি হবে, তা সরকার কিভাবে পূরণ করবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সবার সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।’

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে থেকে ধানমণ্ডি রাপা প্লাজার সামনে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর আসাদ গেট, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা, যা প্রায় দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত চলে। এ সময় মিরপুর সড়ক ও ধানমণ্ডি এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

শিক্ষার্থীরা ‘হাফ পাস ভিক্ষা নয়, আমাদের অধিকার’; ‘সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর কত দিন’; ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, প্রশাসন বিচার চাই’—এসব স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। তারা কিছু যানবাহনের ফিটনেস ও লাইসেন্সও যাচাই করে।

অবরোধ শেষে দুপুর সোয়া ২টার দিকে ৯ দফা দাবি উপস্থান করেন হলিক্রস কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অধরা অত্রি। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া, পর্যাপ্ত ফুটপাত ও ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পরিকল্পিত বাসস্টপেজ নির্মাণ, দুর্ঘটনার বিচারকাজ দ্রুত করা, চালকদের প্রশিক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা ও সাইকেল লেন করা এবং ট্রাফিক আইন পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।

মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান হাওলাদার বলেন, ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএ কার্যালয়ে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তারা। কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। কিন্তু তারা সোমবার পর্যন্ত সময় দেবেন বলে বৈঠকে জানান। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আগামী মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবেন।

ইডেন মহিলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নিঝুম নাহার বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা ২০১৮ সালে যে কথাগুলো বলেছি, এখনো সেই একই কথা বলে আসছি।’

ইডেন কলেজের আরেক শিক্ষার্থী আফসানা নূর বলেন, ‘আমাদের কেন বারবার রাস্তায় নামতে হবে? আমরা রাস্তায় না নেমে ক্লাসে থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ মেহেদী বলেন, সরকারের আশ্বাসে এই আন্দোলন থামানো যাবে না। অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে দাবি মেনে নিতে হবে। মৌখিক আশ্বাসে কাজ হবে না।

একই দাবিতে উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায়ও সকাল ১১টার দিকে সড়কে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পুরান ঢাকায় সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া রামপুরা, মহাখালী রেলগেট, শান্তিনগর, খিলগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় কিছু সময়ের জন্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়।

আরো পড়ুন:

ময়লার গাড়ি দিনে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত উত্তর সিটি করপোরেশনের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *