নিখিল মানখিন :
করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলছেন উপসর্গহীন করোনা রোগীরা। মোট শনাক্তের প্রায় এক-চতুর্থাংশ রোগীর মধ্যে দৃশ্যমান উপসর্গ নেই বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় কম নমুনা পরীক্ষার কারণে দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র অজানা রয়ে গেছে। এর মধ্যে উপসর্গহীন রোগীরা করোনামুক্ত ভেবে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়িয়ে দেদারসে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাবে, যা এক ধরনের নীরব ঘাতক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকা রোগীর চেয়ে উপসর্গহীন করোনা রোগীর অবাধ বিচরণ খুবই ভয়ানক ও আতঙ্কের। আমরা ধরে নিতেই পারি যে, যত মানুষ করোনা পজিটিভ বলে চিহ্নিত হচ্ছেন, তার অন্তত ১০ গুণ মানুষ কিন্তু উপসর্গহীন অবস্থায় ভাইরাসটা বহন করছেন এবং অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র। কারণ, উপসর্গহীন রোগীকে পরীক্ষা করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং ওই রোগী নিজেও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। উপসর্গ না থাকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজনের শরীর একেক রকম আচরণ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে সংক্রমণের পরেও কারও হয়তো উপসর্গ দেখা গেল না। অথচ অন্য কাউকে তিনিই সংক্রামিত করলেন এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি হয়তো মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাসায় অবস্থান এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমেই উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের(আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ধূমকেতু ডটকমকে জানান, অনেক দিন ধরেই উপসর্গহীন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এপর্যন্ত এই সংখ্যা মোট আক্রান্তের এক-চতুর্থাংশ হতে পারে। এমন রোগীর সংখ্যা বড় কথা নয়, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলবে উপসর্গহীন করোনা রোগী। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সরকার প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলতে হবে। বাসায় অবস্থান করলে এবং বাইরের যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
একই পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, শনাক্তকৃত করোনা রোগীদের অনেকের শরীরেই উপসর্গ মিলছে না। শনাক্তকৃত রোগীর কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে গিয়ে সন্দেহজনকভাবে উপসর্গহীন ব্যক্তিকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। অন্যথায় স্বাভাবিক সুস্থ ব্যক্তিকে পরীক্ষার আওতায় আনার প্রয়োজনবোধ করা হয় না। ফলে উপসর্গহীন করোনা রোগী বিরামহীনভাবে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটায়, যা আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারেন না। এমন করোনা রোগী নি:সন্দেহে করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যাহত করবে।
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের জীন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. রোকজন উদ্দিন ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য করোনা আক্রান্ত দেশেও উপসর্গহীন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এমন কিছু সংখ্যক কেস পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় কম নমুনা পরীক্ষার কারণে দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র অজানা রয়ে গেছে। এর মধ্যে উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে দেশের করেনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। উপসর্গহীন রোগীরা করোনামুক্ত ভেবে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়িয়ে দেদারসে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাবে, যা এক ধরনের নীরব ঘাতক বলে জানান অধ্যাপক ডা. মো. রোকজন উদ্দিন।
স্বাস্থ্যবিবিধ পালন করার উপর জোর দিয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের(স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা এবং উপসর্গহীন রোগীদের অবাধ চলাফেরা দেশের করোনা পরিস্থিতিকে আরো ঝুঁকিতে ফেলবে।