ধূমকেতু প্রতিবেদক: করোনা মহামারীতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই সীমিত পরিসরে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের দুই খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
রোববার (২৬ এপ্রিল) থেকে ঢাকা ও আশপাশের বিজিএমইএর সদস্য এমন অন্তত ২০০ কারখানা চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে বিজিএমইএর সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ জানিয়েছেন। তবে বিকেএমইএ কারখানার সংখ্যা জানাতে পারেনি।
আজ অফিসে বসে কাজ করছেন এমন অনেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা গেছে।
যেসব কারখানা চালু হবে সেখানে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতির লক্ষ্য ধরেছে বিজিএমইএ। কেবল নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন চালু করার পরামর্শ দিয়েছে বিকেএমইএ। তাতেও অন্তত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতির প্রয়োজন হবে।
লকডাউন পরিস্থিতিতে যেসব শ্রমিক সংশ্লিষ্ট কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন তাদেরকে দিয়েই কারখানা চালুর কাজটি শুরু হচ্ছে। এই মুহূর্তে দূরে থাকা শ্রমিকদের যেন না ডেকে আনা হয় সেই নির্দেশনাও রয়েছে কারখানা চালুর নির্দেশনায়।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ২৬ মার্চ থেকে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে পোশাক কারখানাগুলো। তার এক মাসের মাথায় জরুরি রপ্তানি আদেশ পালন করতে কীভাবে স্বল্প পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কারখানা চালু করা যায় সেই আলোচনা শুরু হয়।
মালিকপক্ষের পাশাপাশি খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার এই সময়ে সতর্কতার সঙ্গে কীভাবে কারখানা চালু করা যায় তার একটি প্রটোকল তৈরি করে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, আমরা তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছু করছি না; সবকিছু আস্তেধীরে করা হচ্ছে। শনিবার আমরা মালিকদের বলে দিয়েছি, দূর দূরান্ত থেকে কোনো শ্রমিক নিয়ে আসা যাবে না। “কেবলমাত্র যারা কারখানার আশপাশে রয়েছে তাদেরকে দিয়েই কাজ শুরু করতে হবে। খুবই ছোট পরিসরে, ৩০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি করানো যাবে না। অনুপস্থিতির জন্য কারও চাকরিও যাবে না।”
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “আমরা সদস্যদের বলেছি, উপস্থিতি কম রাখার সুবিধার্থে নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন খোলার জন্য। পুরো গার্মেন্টস আজকে খুলবে না। এর পরে ২ মে থেকে কারখানাগুলো পুরোপুরি খুলবে।
“নিটিং, ডায়িং ও সেম্পল সেকশনে লোকবল খুব কম থাকে বিধায় ওইভাবে শুরু করতে বলেছি। দূর দূরান্তে অবস্থানকারী শ্রমিকদের এই মুহূর্তে আসতে নিষেধ করেছি আমরা। কতটি কারখানা চালু হয়েছে সেটা আজকের দিন শেষে বলা যাবে।”
অন্যদিকে যেসব কারখানার আশপাশে পর্যাপ্ত শ্রমিকের উপস্থিতি রয়েছে সেগুলোই খুলতে বলেছে বিজিএমইএ।
সদস্যদের কাছে পাঠানো বিজিএমইএর এক নির্দেশনায় বলা হয়, প্রথম ধাপে কেবল কারখানার আশপাশে বসবাসরত শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে পারবেন। ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতি ঘটানো যাবে। এই কয়দিনের কাজের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আরও ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শ্রমিক সমবেত করে কাজ করবে কারখানাগুলো।
শ্রমিকদের গ্রাম থেকে ঢাকায় আনা যাবে না। এ ছাড়া শ্রমিক ছাঁটাই না করতে কারখানার মালিকদের অনুরোধ করে সংগঠনটি।
এদিকে কারখানা চালুর বিরুদ্ধে বরাবরের মতোই অবস্থান রয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলোর।
গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, যেখানে মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা নেই সেখানে কল-কারখানাগুলো চালু থাকে কীভাবে?
“আমরা এই পরিস্থিতিতে আগামী তিন মাস পোশাক শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বেতনভার বহনের দাবি জানাচ্ছি।