প্রচ্ছদ

তৃণমূলের জয়ের ‘জাদুকর’ কে এই কিশোর?

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: সর্বশেষ লোকসভা ভোটে বিজেপি ‘চমক’ দেখানোর পর আওয়াজ তোলে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসল চমক দেখাবে বঙ্গের জনগণ, এখানে ফুটবে ‘পদ্মফুল’। অর্থাৎ এই নির্বাচনে তৃণমূলকে হটিয়ে ‘আসল পরিবর্তন’ আনবে বিজেপি। বিজেপির এমন আওয়াজ চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয় মমতার কপালে। বিজেপি কি তবে ২০২১ সালের ভোটে জিতে যাবে? মমতা ভাবেন, তবে বিচলিত হননি। সেই সময়ই মমতা ডাকেন ‘পিকে’কে, যার পুরো নাম প্রশান্ত কিশোর।পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট বা রাজনৈতিক কৌশল রচয়িতা। পেশাদার এই পরামর্শকের বাতলানো কর্মপদ্ধতি অনেক জায়গায় সুফল দিয়েছে।

২০১৯ সালের জুনে মোটা অংকের অর্থে নিয়োগ দিয়ে এই ‘জাদুকর’-এর সামনে মমতা ‘মিশন’ হিসেবে দেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদির ‘জাদু’তে তখন সারা ভারতে বিজেপির জয়জয়কার চলছিল। কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের বাগে থাকা অনেক রাজ্যেও জয়ী হয়ে সরকার গড়ে বিজেপি। প্রশান্ত কিশোরকে বলা হয়, মোদির ‘জাদু’ থামাতে হবে, ‘পাল্টা জাদু’ দেখাতে হবে ২০২১ সালের ভোটে। যদিও ‘পিকে’র সক্ষমতার বিষয়ে তৃণমূলেরই একটি অংশ সন্দিহান ছিল। তবে রোববার (২ মে) পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফলাফলে সেই সন্দেহ যেন উবে গেল। বঙ্গের জনগণ সত্যিকারার্থেই যেন জাদু দেখল। নিজেদেরই সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ২১৪+ আসনে জিতে হ্যাটট্রিক সরকার গড়তে চলেছে মমতার তৃণমূল।

তৃণমূলের এই ফলাফলে ফের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এলেন ‘পিকে’। কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য না হয়েও কিভাবে বাংলার নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে গেলেন তিনি, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, প্রশান্ত কিশোরের জন্ম বিহারের রোহতাস জেলায়। উচ্চশিক্ষার পাঠ চুকে তিনি যোগ দেন জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিভাগে। কাজ করেন আফ্রিকায়। আট বছর চাকরির পর ২০১১ সালে ফিরে আসেন ভারতে। গড়েন গবেষণা সংস্থা সিটিজেন্স ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নমেন্ট (সিএজি)।

এই কৌশল রচয়িতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গুজরাটের বিধানসভা ভোটে জিততে এবং ২০১৪ প্রধানমন্ত্রীর আসন দখল করতে নরেন্দ্র মোদিকে ‘কর্মপদ্ধতি’ বাতলে দেন প্রশান্ত। ২০১৫ সালে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে নীতিশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের জোট গড়ে সরকার গঠনেও পথ দেখিয়েছে ‘পিকে’র কর্মপদ্ধতি। পরে অন্ধ্র প্রদেশে বিধানসভা ভোটে জগনমোহন রেড্ডির দলের বিপুল জয়েও ছিল প্রশান্তের বাতলানো ‘কৌশল’।

বলা হয়ে থাকে, আসন ধরে গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর প্রশান্ত সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্বকে এলাকাভিত্তিক বক্তব্য ও প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ করে দেন। তাতেই জনগণ দলকে আপন করে নেয়। সেই আপন করে নেয়ার ফল মেলে ভোটবাক্সে। ঠিক একইভাবে মমতার বিগত সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘দুয়ারে সরকার’ এবং ‘দিদিকে বলো’র মতো জনদরদী এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যাপক প্রচার ও সে মতে নির্বাচনী প্রচারণা কাজে দিয়েছে এবার।

তবে রোববার তৃণমূলের হাতে সবচেয়ে বড় সাফল্য তুলে দিয়ে বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন প্রশান্ত কুমার। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক পরামর্শকের পেশা ছাড়ছেন তিনি। জীবনে এবার ‘অন্য কিছু’ করার কথা ভাবছেন। তবে এই ‘অন্য কিছু’ তার নিজেরই রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত কি-না, তা নিয়ে উঠেছে জল্পনা। অবশ্য অনেকে বলছেন, জল্পনা চলতেই থাকুক, প্রশান্ত তো কখনো মুখ ফোটে কিছু বলেন না, কাজ করে চমক দেখান। আগামী দিনেও হয়তো জনগণকে এভাবে ‘চমকে’ দেয়ার মতো কিছুই করবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *