অভিমত

তাহলে কি ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বই ঠিক : প্রসঙ্গ করোনা ও দুর্যোগ

খোকন কুমার রায়:

ইংরেজ অর্থনীতিবিদ থমাস রবার্ট ম্যালথাস ১৭৯৮ সালে “Essay on The Principle of Population” নামে একটি বই লিখেছিলেন। এ বইটিতে জনসংখ্যার বিষয়ে বলেছিলেন যে, প্রকৃতিগতভাবে মানুষের খাদ্য ধীর গাণিতিক হারে বাড়ে; যেমন- ১, ২, ৩, ৪, ৫…….. কিন্তু অভাব এবং পাপ বিরত না করলে মানুষ বাড়ে দ্রুত জ্যামিতিক হারে; যেমন- ১, ২, ৪, ৮, ১৬……… প্রভৃতি।

তিনি বলেন যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক গতি যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে প্রতি ২৫ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়। কিন্তু কৃষিজমির জোগান সীমাবদ্ধ বিধায় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয় না এবং একই জমি ক্রমাগত চাষে খাদ্য উৎপাদন ক্রমাগত কম হয়। এভাবে জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনে ভারসাম্য থাকে না।

এ অবস্থা থেকে প্রতিকার বিষয়ে তিনি দুটি পদ্ধতি বলেছেন: একটি হলো- বিভিন্ন পদ্ধতিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ; আরেকটি হলো- প্রাকৃতিক প্রতিরোধ।

মানুষ যদি নিজেরা জন্মনিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকবে এবং নানাভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে। যেমনটা আমরা বর্তমান বিশ্বে এবং আমাদের দেশে দেখতে পাচ্ছি। এ অবস্থায় প্রকৃতি নিজেই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে; যেমন- খাদ্যের অভাবে মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগে, নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, নানা রকম মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় এবং অনেক মানুষের মৃত্যু হয়।

বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন আগে পড়া ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্বটিকেই মনে করিয়ে দেয়। বর্তমানে ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এবং নিকট ভবিষ্যতে আরো মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এছাড়াও প্রতি বছর নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে; যেমন- ঘুর্ণিঝড়, সুনামি, ভূমিকম্প, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দাবানল প্রভৃতি।

কাজেই আসুন আমরা সকলে মিলে প্রকৃতিকে আর ধ্বংস না করে স্বাভাবিক ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনি, ভোগ-বিলাসিতা বাদ দিই; খাল-বিল, নদ-নদী, পাহাড়, বন প্রভৃতি দখল ও ধ্বংস না করি এবং কার্বণডাই অক্সাইডের কালো পৃথিবী না বানিয়ে প্রাণদায়ক অক্সিজেনের সবুজ পৃথিবী বানাই। সবাই সুস্থ থাকি, ভালো থাকি।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু.কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *