ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: চলতি মাসের শুরুর দিকে আফগানিস্তানে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন এক উপস্থাপক। তাঁর নাম বেহেস্তা আরঘান্দ। এই নারী প্রথম কোনো তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আফগানিস্তানের বার্তা সংস্থা টোলোর হয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। সেই নারী এখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বেহেস্তা যখন ওই তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তখন বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলেন। এর দুদিন পর আবারও গণমাধ্যমে সাড়া ফেলেন তিনি। কারণ, তিনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকার নেন। টোলো নিউজের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, এই প্রথম মালালা আফগানিস্তানে কোনো টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দিলেন।
এসব সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন বেহেস্তাও। কিন্তু তালেবান ক্ষমতা দখল করায় দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পক্ষে তাঁর যুক্তি, অনেক সাধারণ আফগান ও সাংবাদিকদের মতো তিনিও ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বেহেস্তা বলেন, ‘আমি দেশ ছেড়েছি। কারণ, লাখো আফগানের মতো আমিও তালেবানের ভয়ে ছিলাম।’
এ নিয়ে সিএনএনের কথা হয় টোলো বার্তা সংস্থার কর্ণধার সাদ মোহসেনির সঙ্গে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেহেস্তার দেশ ছাড়ার ঘটনা একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘পরিচিত সাংবাদিকেরা মোটামুটি সবাই দেশ ছেড়ে গেছেন। যাঁরা চলে যাচ্ছেন, তাঁদের জায়গায় নতুনদের নিয়োগ দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
সাদ মোহসেনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এখন দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হলো, সাংবাদিকদের দেশ ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ, তাঁরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, নিজেদের কার্যক্রম চালু রাখা।’
আবারও বেহেস্তার কথা ফেরা যাক। ছোটবেলা থেকেই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ২৪ বছর বয়সী এই নারী বলেন, তিনি যখন নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বড় হয়ে সাংবাদিক হবেন।
এই লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনাও করেছেন বেহেস্তা। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর বেশ কয়েকটি বার্তা সংস্থা এবং রেডিওতে কাজ করেন বেহেস্তা। চলতি বছর তিনি যোগ দেন টোলো বার্তা সংস্থায়। এ প্রসঙ্গে বেহেস্তা বলেন, ‘আমি সেখানে ১ মাস ২০ দিন কাজ করেছি।’
ওই তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর সাদ মোহসেনি ওয়াশিংটন পোস্টে একটি কলামও লিখেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, এই প্রথম কোনো নারী উপস্থাপকের সঙ্গে তালেবান নেতা টিভিতে উপস্থিত হলেন। কারণ, তালেবান নিজেদের ‘মডারেট’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।
তবে এই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বেহেস্তা বলেন, ‘এই সাক্ষাৎকার নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু আমি কাজটি করেছিলাম আফগান নারীদের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে বলেছিলাম, কাউকে না কাউকে এই কাজ শুরু করতে হবে। আমরা যদি ঘরে বসে থাকি, বের না হই, তবে তালেবান বলবে, নারীরা কাজ করতে চায় না।’
আর ইতিহাস সৃষ্টি করা ওই সাক্ষাৎকারে বেহেস্তা বেশ কিছু কড়া কথা বলেছিলেন তালেবান নেতাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ওই তালেবান সদস্যকে বলেছিলাম, আমরা আমাদের অধিকার চাই। আমরা কাজ করতে চাই।’
এরপর আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের ভয়াবহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কারণ, ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।
ফলে মালালার সাহায্য নিয়ে দেশত্যাগ করেন বেরেস্তা। গত মঙ্গলবার কাতারি এয়ার ফোর্সের একটি ফ্লাইটে দেশত্যাগ করেন বেহেস্তা। তবে তিনি দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, তালেবান যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, দেশের পরিস্থিতি যদি বদলায়, তবে তিনি দেশে ফিরবেন।