প্রচ্ছদ

তালেবানের পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্ব : অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার চায় জাতিসংঘ

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: আফগানিস্তান তালেবানের কবজায় যাওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব নেতৃত্ব। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নিজ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা উঠে এসেছে নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে। অন্যতম শীর্ষ পরাশক্তি চীন, রাশিয়ার মতো দেশ তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও আফগানিস্তানে তালেবানের সম্ভাব্য সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে নতুন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, তা এখনও পরিস্কার করেনি।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার ও আফগানযুদ্ধের সমাপ্তি হওয়ায় পাকিস্তান ও ইরান সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি তারা।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য আফগান পরিস্থিতির জন্য বিশ্ব নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি আফগান পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে দায়ী করেছে। তবে ভারত তালেবান সরকারকে সমর্থন করবে না বলে বার্তা দিয়েছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি ও রয়টার্সের।


জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিশেষ বৈঠক: গতকাল সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে আফগানিস্তানে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারে নারীদেরও সমান ও অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। ওই বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আতঙ্কে আফগানিস্তান ত্যাগ করা আফগানদের আশ্রয় দিতে বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় তালেবানদের অবশ্যই সংযত থাকতে হবে। আফগানিস্তানজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর আসছে উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, আমরা আফগানিস্তানের জনগণকে ফেলে দিতে পারি না এবং তা করব না। আফগানিস্তান যেন আবার বৈশ্বিক সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দু না হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।


আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে প্রস্তুত চীন: আফগানিস্তানের সঙ্গে দৃঢ় ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক’ সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত চীন। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে আফগান জনগণের ইচ্ছা ও পছন্দকে চীন সম্মান করে। চীনের সঙ্গে তালেবানের সুসম্পর্কের ইচ্ছাকে বেইজিং স্বাগত জানায়।’ তবে চীন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবে বলেও জানান চুনইং। চীন বিশেষত শিনজিয়াংয়ে আফগান পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেবে না বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় ‘গ্লোবাল টাইমস’ পত্রিকা।


আফগানরা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙেছে- ইমরান খান: তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গতকাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘আফগানরা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙেছে।’ পাকিস্তানে জাতীয় একমুখী পাঠ্যসূচি প্রণয়নবিষয়ক এক সভায় ইমরান এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
ইমরান খান বলেন, অন্যের সংস্কৃতি ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া দাসত্বের নামান্তর। যখন আপনি অন্য কারও সংস্কৃতিকে উন্নত মনে করে তা গ্রহণ করবেন, তখনই আপনি সেই সংস্কৃতির দাসে পরিণত হবেন। আফগানরা সেই দাসত্বের শেকলই ভেঙেছে।
তালেবানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের স্পষ্ট অবস্থান সত্ত্বেও আফগানিস্তানের পট-পরিবর্তন নিয়ে ইমরান খানের মুখে প্রশংসার সুর শোনা গেল।
আফগানিস্তানে ১৯৯৬ সালের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশ। তার মধ্যে ছিল পাকিস্তান। এবারও পাকিস্তান জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে আফগানিস্তান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে গতকাল ইসলামাবাদে তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।


তালেবানের সঙ্গে রাশিয়ার বৈঠক: কাবুলে আজ মঙ্গলবার তালেবানের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে রাশিয়ার। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পারে দেশটি। আজ কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।


আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ফল- অ্যাঙ্গেলা মেরকেল: জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল গতকাল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জার্মানি তাদের বলেছিল, প্রয়োজন হলে জার্মান সেনারা সেখানে থাকবে। তবে তা হয়নি। এদিকে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস গতকাল বলেছেন, আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বকে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই পরিণতির জন্য বিশ্ব প্রস্তুত ছিল না। বৈশ্বিক নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে। তবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়া বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নিয়ে তারা কিছু বলেননি।


যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে থাকা আফগানিস্তানের রিজার্ভ পাবে না তালেবান: যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা গতকাল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তালেবান পাবে না। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না যুক্তরাজ্য- জনসন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতকাল বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে জি-৭ নেতাদের জরুরি বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন জনসন। এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান বৈশ্বিক ব্যর্থতার প্রমাণ।


তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না ভারত: যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক হয়। সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ভারত আগেই জাতিসংঘে নিজেদের অবস্থান খানিকটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। তালেবান সরকার গঠন করলে তাদের স্বীকৃতি দেবে না ভারত। জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে অনেকেই ভারতের এই অবস্থান সমর্থন করেছে।


দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ- রাইসি: ইরানের কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গতকাল বলেছেন, আফগানিস্তানের যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *