ঢাকা ও আশপাশে লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে বর্তমানে খুব ভোগান্তিতে আছে মানুষ। দেশে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি নেই। তবে এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে ঢাকা, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহের মানুষ।

পিডিবি সূত্র বলছে, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরো সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। বাগেরহাটের রামপাল কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি বন্ধ ছিল কারিগরি কারণে। গতকাল থেকে দুটিই চালু হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী কেন্দ্রের একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণে, তাই অর্ধেক সরবরাহ হচ্ছে।

প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ ছিল আমদানি করা এলএনজি সরবরাহে নিয়োজিত সামিটের টার্মিনাল। এতে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসসংকট তৈরি হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সামিট জানিয়েছে, মহেশখালীতে ভাসমান এ টার্মিনাল গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে।

তবে বিদ্যুৎ খাতে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়ায় কারিগরি সমস্যা হয়েছে, যা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। রামপাল পুনরায় চালু হয়েছে, আদানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দ্রুত গ্যাস আমদানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।

আরও পড়ুনঃ প্রশাসনিক কার্যক্রম সংস্কার ঢাবি

ঢাকা ও আশপাশে লোডশেডিং পরিস্থিতিঃ

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি  ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি। এ দুটি সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ঢাকায় আগের দিনের মতো লোডশেডিং ছিল গতকাল। গতকাল দিনের বেলাতেও ডেসকো এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াট ও ডিপিডিসি এলাকায় ২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। এতে করে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা আর কোথাও দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে।

তবে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, গতকাল দিনের বেলায় তিনটার দিকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে তারা। গড়ে ২৫ শতাংশ সরবরাহ কম পেয়েছে আরইবি।

আরইবি ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা জেলার সব গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গতকাল ৩৩ শতাংশ সরবরাহ ঘাটতি ছিল। কুমিল্লা এলাকায় সরবরাহ ঘাটতি ছিল ৩৪ শতাংশ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এটি ছিল ৩৩ শতাংশ। এর বাইরে রাজশাহী ২৭ শতাংশ, রংপুর ও সিলেটে ১৯ শতাংশ করে, চট্টগ্রামে ৬ শতাংশ ও বরিশালে ১ শতাংশ বিদ্যুৎ–ঘাটতি ছিল।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বেশ কয়েক দিন ধরে চলছে লোডশেডিং। ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জুলফিকার বলেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় গড়ে বিদ্যুৎ চাহিদা ২১২ মেগাওয়াট। সরবরাহ হচ্ছে ১৩০ মেগাওয়াট। তাই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, আগানগর, নাগরমহল ও ইস্পাহানি এলাকায় পোশাকপল্লিতে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার শোরুম ও ৫ হাজার কারখানা রয়েছে। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকানমালিক সমবায় সমিতির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের লোকসান হচ্ছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহিদ বলেন, দিনে ও রাতে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং হচ্ছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে এক ঘণ্টা থাকে না। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *