জীবন ও পরিবার

ডে কেয়ারে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বেসরকারি পর্যায়ে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র (ডে কেয়ার সেন্টার) স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা থাকতে হবে। নিবন্ধন ফি হবে ১০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে মাসিক ফি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে থাকতে হবে।

পাকা দালানে লিফট না থাকলে সর্বোচ্চ চতুর্থ তলা, লিফট থাকলে সর্বোচ্চ সপ্তম তলায় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। প্রতিটি শিশুর জন্য গড়ে ৫০ বর্গফুট হারে (শিশুর উপযোগী ইনডোর খেলাধুলা, খাবার, পড়াশোনা, ব্যয়াম ও ঘুমানোর জন্য) কেন্দ্রের আয়তন সর্বনিম্ন ৩ হাজার বর্গফুট হতে হবে

এমন নিয়ম রেখে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বিধিমালা করা হচ্ছে। এজন্য ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র বিধিমালা, ২০২১’ এর প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, সাধারণভাবে প্রতিটি ডে কেয়ার সেন্টারের শিশুর সংখ্যা হবে ৩০ জন, তবে প্রমিত মান অনুযায়ী স্থান সংকুলান সাপেক্ষে কেন্দ্রে শিশুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০ জন হতে পারবে। চলতি বছরের ২৪ জুন ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২১’ করা হয়। আইনের অধীনেই বিধিমালাটি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শিশু ও সমন্বয় উইং) মো. মুহিবুজ্জামান বলেন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইনের অধীনে একটি বিধিমালা হচ্ছে। প্রাথমিক একটি খসড়াও হয়েছে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর খসড়াটি করেছে। আমরা এটি ঘষামাজা করে একটা শেইপে আনছি। এজন্য একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর খসড়া বিধিমালাটি চূড়ান্ত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং করবো, স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিধিমালা ছাড়া পরিপূর্ণভাবে আইন বাস্তবায়ন করা কঠিন। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইনের অনেক স্থানে লেখা আছে, বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত হবে। আইনের পুরোপুরি সুফল পেতে হলে বিধিমালা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই আইনটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা বিধিমালায় হাত দিয়েছি।

কেন্দ্রে টয়লেট, রান্নাঘর ও পানির সুব্যবস্থা থাকতে হবে। টয়লেট ও বেসিন শিশুর বয়স উপযোগী উঁচু স্থানে স্থাপন করতে হবে, পানি পানের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, বারান্দার নিরাপত্তা দেয়াল বা বেড়া থাকতে হবে

নিবন্ধন সনদ দেওয়ার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, বেসরকারি পর্যায়ে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করতে চাইলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। নিবন্ধনের ফি হবে ১০ হাজার টাকা।

শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা থাকতে হবে জানিয়ে বিধিমালায় বলা হয়, উদ্যোক্তার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক ও শিশু দিবাযত্ন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

নিবন্ধন সনদ ইস্যুর ছয় মাসের মধ্যে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। কোনো ব্যক্তি এই সময়ের মধ্যে কেন্দ্র পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন সনদ বাতিল হয়ে যাবে।

নিবন্ধন নবায়ন ফি পাঁচ হাজার টাকা হবে জানিয়ে এতে বলা হয়, নিবন্ধন সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে নবায়নের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হলে মেয়াদোত্তীর্ণের ৩০ দিনের মধ্যে বিলম্ব ফি পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে সনদ নবায়নের আবেদন করতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়, পাকা দালানে লিফট না থাকলে সর্বোচ্চ চতুর্থ তলা, লিফট থাকলে সর্বোচ্চ সপ্তম তলায় শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। প্রতিটি শিশুর জন্য গড়ে ৫০ বর্গফুট হারে (শিশুর উপযোগী ইনডোর খেলাধুলা, খাবার, পড়াশোনা, ব্যয়াম ও ঘুমানোর জন্য) কেন্দ্রের আয়তন সর্বনিম্ন ৩ হাজার বর্গফুট হতে হবে।

কেন্দ্রে টয়লেট, রান্নাঘর ও পানির সুব্যবস্থা থাকতে হবে। টয়লেট ও বেসিন শিশুর বয়স উপযোগী উঁচু স্থানে স্থাপন করতে হবে, পানি পানের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা, বারান্দার নিরাপত্তা দেয়াল বা বেড়া থাকতে হবে।

এছাড়া ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও পোশাক পরিবর্তনের জায়গা থাকতে হবে। মেয়ে ও ছেলে শিশুদের জন্য টয়লেটে আলাদা আলাদা নির্দেশিকা, শিশুদের খেলার জন্য বয়সভিত্তিক আলাদা জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

কেন্দ্রে প্রবেশপথ প্রশস্ত, সমতল, আলোকিত- যা শিশুদের উপযোগী হতে হবে; বয়সভিত্তিক ইনডোর ও আউটডোর গেমের ব্যবস্থা; পড়া, খাওয়া, খেলাধুলা ও ঘুমানোর আলাদা আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে।

কেন্দ্রে অগ্নি নির্বাপকযন্ত্রের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে; শিশু যেন বাইরে যেতে না পারে সেই রকম নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকতে হবে; আশপাশে জলাশয় থাকলে তা আড়াল করার ব্যবস্থা করতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিশু সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে খসড়া বিধিমালায়। এক্ষেত্রে ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, মাসিক ফি দুই হাজার টাকা।

প্রতি মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে চলমান মাসের মাসিক ফি অভিভাবককে জমা দিতে হবে। শিশু মাসের আংশিক সময়ে কেন্দ্র অবস্থান করলেও পূর্ণ মাসিক ফি জমা দিতে হবে।

ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির কেন্দ্রের ক্ষেত্রে শিশু ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, মাসিক ফি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা। ব্যক্তি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত নিম্নবিত্ত শ্রেণির কেন্দ্রের ক্ষেত্রে শিশু ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, মাসিক ফি সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা নিতে হবে।

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মা বা ব্যক্তির ৪ মাস থেকে ৬ বছর (৭২ মাস) বয়সের শিশুর জন্য মা/বাবা/অবিভাবককে নির্ধারিত ভর্তি ফরমে শিশু ভর্তির আবেদন করতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, শিশুর বয়স অনুযায়ী তিনবেলা (সকালে নাস্তা, দুপুরে খাবার ও বিকেলে হালকা নাস্তা) খাবার পরিবেশন করতে হবে।

নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা মেনু অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করতে হবে। ফল, বিস্কুট, কেক ছাড়াও শিশুর স্বাস্থ্য উপযোগী সব খাবার যথাসম্ভব কেন্দ্রে রান্না করে পরিবেশন করতে হবে। শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো খাদ্য দেওয়া যাবে না।

শিশুর স্বাস্থ্য সেবা ও শিশুর শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়েও খসড়া বিধিমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

পাংখোয়াদের জন্য দরকার আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *