নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ‘সিটি গ্রুপ’। এখন ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ও নাম লেখাচ্ছে গ্রুপটি। সিটি গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে হাইটেক পার্ক স্থাপনে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠান।
সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সিটি গ্রুপকে পার্ক ডেভেলপার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকারের হাইটেক পার্ক অথোরিটি।’
তিনি জানান, দুই বছরের মধ্যে ডেমরায় ১১৫ একর জমির ওপর হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হবে। বিশ্বের সর্বাধুনিক এ পার্ক গড়ে তুলতে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এখানে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, শিল্প পার্কটিতে একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কনভেনশন সেন্টার, ৫ তারকা হোটেল, খেলার মাঠসহ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী উৎপাদন ও গবেষণার জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
তিনি জানান, ‘অ্যাপল, স্যামসাংসহ বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টদের এখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। একইসঙ্গে সিটি গ্রুপও নিজস্ব আইসিটি কোম্পানি স্থাপন করবে।’
এর আগে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ৩১ মে সিটি হাই-টেক পার্ক-কে বেসরকারি হাই-টেক পার্ক হিসেবে ঘোষণা দেয় বলে জানিয়েছেন সিটি গ্রুপের কর্মকর্তারা।
এর ফলে এই পার্কে বিনিয়োগকারীরা ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধাসহ একটি ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৪টি প্রণোদনা সুবিধা পাবেন।
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও পরিবেশগত সমীক্ষার কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছে সিটি গ্রুপ।
ডেভেলপার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর শিল্প গ্রুপটি এখন থেকে অফ-সাইট ও অন-সাইট ফ্যাসিলিট তৈরি, মাটি ভরাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ, স্ট্যান্ডার্ড বিল্ডিং নির্মাণ, পার্কের অভ্যন্তরে প্রশস্ত রাস্তা, লেক, উন্নতমানের ফুড কোর্ট, এসটিপি স্থাপনসহ পার্ক ডেভেলপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কাজ করার সুযোগ পাবে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক এবং সিটি হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হাসান বলেন, ‘যেসব ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তিপণ্য বাংলাদেশে তৈরি করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারেনি, আমরা সেগুলো তৈরি করব।’
‘মাইক্রো প্রসেসর, চিপ ডিজাইন, সার্কিট ডিজাইন, মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ উৎপাদন/সংযোজন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল ও টেকনোলজি কনসালটেনশন ফার্ম, নেটওয়ার্ক, ডাটা সেন্টার, সাইবার সিকিউরিটি, প্রোগ্রামিং, প্রজেক্ট ম্যানেজেমেন্ট এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ আইটি শিল্প ইউনিট স্থাপনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হবে। এ ছাড়া ডরমিটরি ও সায়েন্স পার্ক স্থাপন করা হবে।’
নির্মাণ কাজ শুরু করার পর ৫-৭ বছরের মধ্যে এটি শেষ করার প্রাথমিকি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিটি গ্রুপকে পার্ক ডেভেলপমেন্টের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, সিটি গ্রুপ দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় একটি নাম। সিটি গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠান হাই-টেক পার্ক স্থাপনে এগিয়ে আসায় দেশের অন্য কোম্পানিগুলোও উৎসাহিত হবে। সিটি গ্রুপ দ্রুততম সময়ে এই পার্ক ডেভলপ করে কর্মচঞ্চল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
সিটি গ্রুপ দেশের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ। বর্তমানে শিল্প গ্রুপটি বাংলাদেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করছে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সরিষার তেল উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে শিল্প গ্রুপটি কার্যক্রম শুরু করে।
দেশের শীর্ষ এ গ্রুপটির খাদ্যপণ্য, ইস্পাত, মুদ্রণ ও প্যাকেজিং, শিপিং, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, শেয়ারবাজার, হাসপাতাল, মিডিয়াসহ ২৫টির বেশি বৃহৎ শিল্প ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে।