শিল্প ও বাণিজ্য

ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম সংযোগ ‘নগদ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিক্ষা, কারিগরি জ্ঞানবঞ্চিত বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, বয়স্কভাতাভোগী জনগোষ্ঠী এখন অতি সহজেই নগদের মাধ্যমে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি যাচ্ছে নগদের মাধ্যমে। আর দেশের বিভিন্ন প্রতিবন্ধীসহ সুবিধা বঞ্চিত নারী ও পুরুষদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে নগদ।

সোমবার (৮ নভেম্বর) রাজশাহীর পবা উপজেলার ২ নম্বর হুজুরী পাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এখানে বিধবা ভাতা নিতে আসা মোছা. রোজিনা বেগম বলেন, আমরা আগে ব্যাংকের মাধ্যমে বিধবা ভাতা নিতাম। সেখানে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো, লাইনে দাঁড়াতে হতো। কিন্তু এখন আমরা নগদের মাধ্যমে ভাতা নিই। এজন্য আমাদের কোনো অসুবিধা হয় না এবং নগদ কোনো টাকাও কেটে রাখে না।

এখানে এজেন্ট নিয়োগ পাওয়া এক প্রতিবন্ধী নারী জানান, প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারের অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। তেমন কোনো ভারী কাজ করতে পারতাম না। কিন্তু নগদ আমার পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আমাকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এখন আমি ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা চালানো ছাড়াও দুবেলা-দুমুঠো খেতে পারছি।

নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, সরকারের আর্থিক ডিজিটাল সেবা সবচেয়ে বেশি দিয়ে আসছে নগদ। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগণকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে এসেছে নগদ।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে চারবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৫৮ লাখ দুস্থ ও হতদরিদ্র স্বচ্ছতার সঙ্গে নগদদের মাধ্যমে ভাতা পেয়েছেন। এই দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসে সরকার। এর বাইরে এক দশকের বেশি সময় ধরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস খাতে চলে আসা মনোপলি নগদের মাধ্যমেই ভাঙতে পেরেছে সরকার। যার মাধ্যমে এই খাতের লেনদেনে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জাহিদুল ইসলাম সজল জানালেন, নগদ চালু হওয়ার মাধ্যমেই আর্থিক লেনদেনসহ বিল প্রদান সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট খাতে ডিজিটালাইজেশনের রূপান্তর ঘটে। সরকারি এই সেবাটি একের পর এক নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া মানুষটির জন্য ডিজিটাল সেবার প্রসার ঘটে এবং তাদের জীবনমানেও পরিবর্তন ঘটে।

নগদই বাংলাদেশের প্রথম কোনো কোম্পানি যারা গ্রাহক পরিচয় নিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনিক কেওয়াইসি (ই-কেওয়াইসি) চালু করে। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগদের উদ্বোধন করার সময় থেকেই নগদ ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো কোম্পানিতে ই-কেওয়াইসির প্রচলন ছিল না।

ই-কেওয়াইসি প্রচলনের ফলে এক দিকে যেমন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যায়, অন্যদিকে অ্যাকাউন্ট খোলা সংক্রান্ত খরচও এড়াতে পারে কোম্পানিগুলো। প্রথম দিকে অনেকেই এর সমালোচনা করলেও পরে একে একে সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি নগদদের উদ্ভাবনকে অনুসরণ করে। পরে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা কোম্পানিও ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে গ্রাহক হিসাব খোলার পদ্ধতি চালু করে সাফল্য পেতে শুরু করে।

ই-কেওয়াইসি জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি। কিন্তু দেশে যেহেতু স্মার্টফোনের ব্যবহার অনেক কম, সে কারণে পরে নগদ *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি চালু করে। ফলে এখন দেশের যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে *১৬৭# ডায়াল করে চার ডিজিটের পাসওয়ার্ড দেওয়ার মাধ্যমে নগদের অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব।

তিনি বলেন, এটি এখনো পর্যন্ত আর্থিক খাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে এমন একটি উদ্ভাবন গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। সে কারণে গত বছরের শেষ দিকে নগদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশ্বকাপ খ্যাত উইটসা পুরস্কার পায়।

অ্যাকাউন্ট খোলার এ প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের ‘পরিচয়’ অ্যাপের সুবিধা পেয়েছে ‘নগদ’। যেখানে কোনো গ্রাহক *১৬৭# ডায়াল করলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে থাকা গ্রাহকের তথ্য পরিচয় অ্যাপের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেজ থেকে যাচাই করে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

বিস্তৃত এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর ভর করেই করোনার সময়ে নগদের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য আর্থিক অনুদান ও সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড করতে পেরেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে নগদের মাধ্যমে সরকার তিন কোটি মানুষকে সাড়ে আট কোটিবার নানা ধরনের ভাতা, উপবৃত্তি ও অনুদান বিতরণ করেছে।

শুরু থেকেই ডাক বিভাগের এই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি সেন্ড মানি বা টাকার লেনদেনকে ফ্রি করেছে। একইভাবে সব ধরনের পরিষেবার বিল ফ্রি-তে দেওয়ার প্রচলন করে নগদ। তাছাড়া এক বছরেরও বেশি সময় আগে নগদ ক্যাশ-আউট চার্জ হাজারে ৯ টাকা ৯৯ পয়সায় (ভ্যাটসহ ১১ টাকা ৪৯ পয়সা) নামিয়ে আনে। অথচ বাজারের বিদ্যমান ক্যাশ-আউট চার্জ হাজারে ২০ টাকা।

ইতোমধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ‘নগদ’ জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও রাখছে অবদান।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে হলো ২ হাজার ৫৫৪ ডলার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *