নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনদিন থেকে তিন ঘণ্টা আগে পর্যন্ত স্থানীয় মানুষের স্মার্টফোনে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ও অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এবং আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংস্থা গুগলের সহায়তায় একটি আধুনিক বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হবে। রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
আগামীতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাঁধভিত্তিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (পরিকল্পনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ার ফলে সৃষ্ট বন্যার পূর্বাভাস এবং আগাম সতর্কবার্তা ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এটুআই এবং গুগলের সহায়তায় এটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাপাউবো’র বিদ্যমান আগাম পাঁচ দিনের বন্যা পূর্বাভাস উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণ করে উন্নততর প্লাবন মানচিত্রের সাহায্যে বন্যা শুরু হওয়ার তিনদিন থেকে তিন ঘণ্টা আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী পর্যায়ে তাৎক্ষণিক ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে গুগল পুশ নোটিফিকেশনের (ইন্টারনেট সংযোগ চালু থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা আসবে) মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের এই পূর্বাভাস দিচ্ছে জানিয়ে উপ-সচিব বলেন, ২০২০ সালে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদী তীরবর্তী ১৪টি জেলার ৩৮টি উপজেলায় এই কার্যক্রমটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়।
২০২০ সালে বন্যাকবলিত এলাকার ৩ লাখ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে প্রায় ১০ লাখ পুশ নোটিফিকেশন পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লুৎফুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাপাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সারাদেশে ১০৯টি স্টেশনে বন্যা মনিটরিং এবং ৫৫টি স্টেশন থেকে বন্যা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুগলের কারিগরি সহায়তায় ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এসব স্টেশন এলাকার আওতাভুক্ত ৫৫টি জেলার ৯৯টি উপজেলার বন্যাপ্রবণ এলাকার জনগণের কাছে স্মার্টফোনের পুশ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বন্যার আগাম তথ্য ও পূর্বাভাস প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে।
‘গুগল ম্যাপ এবং গুগল ফিডে আগাম বন্যা সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট সতর্কতামূলক বার্তা যাচ্ছে। বার্তাগুলো পানির স্তরের উত্থান-পতন, বন্যার গভীরতা, তীব্রতাসহ বন্যা অঞ্চলের তথ্য দিচ্ছে।’
গুগল অনুসন্ধানে বন্যা সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্য ও পরামর্শ, যেমন- সুরক্ষা সম্পর্কিত পরামর্শ, ফসল তোলার পরামর্শ, বন্যার অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কিত তথ্য, জরুরি সরবরাহের তথ্য ইত্যাদি পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি গুগল ম্যাপ এবং গুগল আর্থের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্থানের বন্যা সতর্কতার ভিত্তিতে প্লাবনের দৃশ্যপট নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে বলেও জানান উপ-সচিব।
পূর্বাভাস দেওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিদিন দেশের ১০৯টি সেন্টার থেকে তথ্য নেওয়া হয়। সেই তথ্যগুলো প্রসেস করে এটুআইয়ের মাধ্যমে গুগলের কাছে পৌঁছানো হয়। গুগল এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইন্টারপ্রেট করে, তাদের ফোরকার্স্টিং মডেল ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় তিনদিন থেকে তিন ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দেয়।
‘ধরুন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে বন্যা হবে, ওই এলাকার যত স্মার্টফোন ব্যবহারকারী আছেন তাদের কাছে সয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজ চলে যাবে (পুশ নোটিফিকেশন)। ইন্টারনেট অন রাখলেই হবে। একই সঙ্গে গুগল ম্যাপিং করেও দেবে। কেউ গুগলে সার্চ দিয়ে এই ম্যাপ দেখে নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে না তাদের কাছেও বন্যার পূর্বাভাসের মেসেজ কিভাবে পাঠাতে পারবো, সেটিও আমরা দেখছি। এক্ষেত্রে হয়তো মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সহায়তা লাগবে। এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার পূর্বাভাসও এই ব্যবস্থার অধীনে আনার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কারণে কোনো বাঁধ উপচেপড়ার উপক্রম হলে ওই এলাকার লোকজনের ফোনে সতর্কবার্তা যাবে।
ডিজিটাল পূর্বাভাসের জন্য এটুআই ও গুগলের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল জানিয়ে উপ-সচিব বলেন, এটুআই কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। আমাদের ডাটাগুলো প্রসেস করে গুগলকে দেওয়ার জন্য একটি আর্কাইভ টুল তৈরি করা হয়েছে। আমাদের ডাটাগুলোও আর একটু প্রসেসিং করার দরকার ছিল, সেজন্যও এটুআই একটি টুল ডেভেলপ করে দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কারিগরি পরামর্শও তারা দিচ্ছে আমাদের।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উদ্বোধন করা হবে সোমবার বিকেল ৩টায়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
আরো পড়ুন:
৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রযুক্তিখাতে