ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: পৃথিবীতে জন্মের পর মানুষ সাধারণত মা-বাবার ভালোবাসা পেয়ে থাকে। অনেকের ভাগ্যে সেটি নাও জুটতে পারে। তবে নবজাতক সন্তানকে মা যখন ডাস্টবিনে ফেলে চলে যান, এটি সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা। শিশু ফ্রেড্ডি ফিগার্সের ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন অমানবিকতা। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কুইন্সি এলাকায় ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরই মা তাকে ফেলে দেন ডাস্টবিনে। দুই দিন বয়সী ফ্রেড্ডিকে কুড়িয়ে দত্তক নিয়েছিল নাথান ও বেটি মে নামের এক দম্পতি। এই নির্মম সত্যটি ফ্রেড্ডি জেনেছিলেন আট বছর বয়সে। স্কুলের বন্ধুরা তাকে ডাম্পস্টার বেবি, ট্র্যাশ ক্যান বয়, ডার্টি বয় বলে ব্যঙ্গ করত। স্কুলবাস থেকে নামার সময় তাকে ধরে ডাস্টবিনেও ফেলে দিত তারা।
এই ফ্রেড্ডি ফিগার্সই নিজের যোগ্যতার বলে হয়েছেন আবিষ্কারক, উদ্যোক্তা ও টেলিকম মিলিয়নিয়ার। মাত্র ৯ বছর বয়সে ২৪ ডলার দিয়ে একটি ভাঙা ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার কেনেন তিনি। পুরনো হওয়ায় কম্পিউটারটি সঠিকভাবে কাজ করছিল না। রেডিও, অ্যালার্ম ঘড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রায় ৫০ বারের চেষ্টায় সেটি চালু করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে স্কুল ল্যাবের নষ্ট কম্পিউটারগুলো ঠিক করা শুরু করেন। সেটি নজরে আসে স্কুলের পরিচালকের। এরপর কুইন্সি মেয়রের কার্যালয় সিটি হলে তাকে ডাকা হয়। সেখানে শতাধিক কম্পিউটার ঠিক করার কাজ পান তিনি। ঘণ্টাপ্রতি ১২ ডলার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়।
কুইন্সি শহরে পানির চাপ মাপার জন্য কোডিংয়ের একটি কাজ পান ফ্রেড্ডি। খুবই কম মূল্যে ওই কাজ করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই কাজের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ডলার পারিশ্রমিক চায়। নিজের কম্পিউটিং ব্যবসা শুরু করার জন্য মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দেড়শরও বেশি গ্রাহক তার ছিল। ফ্রেড্ডি তাদের ওয়েবসাইট ও ফাইল স্টোরেজের কাজ করতেন। ২২ বছর বয়সে স্মার্ট গ্লুকোমিটার আবিষ্কার করেন তিনি। এটি মানুষের ব্লাড সুগারের মাত্রা কাছের জনকে জানাবে এবং ইলেকট্রিক হেলথ রেকর্ডে সংরক্ষিত রাখবে। ব্লাডে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা সর্তকবার্তাও পাঠাবে।
আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত ফ্রেড্ডির পালক বাবা নাথান অদ্ভুত আচরণ করতেন। বাবা যাতে হারিয়ে না যান সে জন্য জুতার তলায় সার্কিট বোর্ড, স্পিকার, মাইক্রোফোন ও ওয়ার্ড এরিয়া নেটওয়ার্ক কার্ড বসিয়ে দেন তিনি। এতে বাবা নাথানের জিপিএস লোকেশন ট্র্যাক করতে পারতেন তিনি। ২০১৪ সালে এই শু ট্র্যাকার প্রযুক্তি ২.২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন তিনি।
অ্যাটর্নি নাটালিকে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন ফ্রেড্ডি ফিগার্স। বর্তমানে তাদের এক কন্যাসন্তান আছে। তার মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনেকের কাছে ফ্রেড্ডি এক অনুপ্রেরণার নাম।