খেলাধুলা

টোকিও অলিম্পিকের মেডেল কথন

সাদিয়া মাহবুব সারা, ধূমকেতু ডটকম: গত কয়েকদিনে বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গন আলোড়িত করে রেখেছে ২৩ জুলাই শুরু হওয়া ‘টোকিও অলিম্পিক ২০২০’। গতবছর করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়া বিশ্বের সব থেকে বড় ক্রীড়ার আসর অনেক জল্পনা-কল্পনার পর চলমান রয়েছে। এবারের আসর করোনার কারণে অনেক দিক থেকেই আলাদা। সকল অ্যাথলেটদের মানতে হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ।

তবে টোকিও অলিম্পিকের অন্যতম আকর্ষণ বিজয়ীদের মাঝে তুলে দেয়া মেডেলগুলো। প্রযুক্তিগত দিক থেকে বরাবরই সব থেকে এগিয়ে থাকে জাপান। এবারের আসরে তাদের তৈরি করা পদকেও সেই সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে। এই অলিম্পিকে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে। যেমন, পদকগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নষ্ট এবং বাতিল মোবাইল ফোন। পুরানো বৈদ্যুতিক এই জিনিস গলিয়ে তা থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো ছেঁটে ফেলে বাকিটুকু দিয়ে পাথরের মতো এক ধরনের উপাদান তৈরি করা হয়েছে। সেটা থেকেই তৈরি হয়েছে এবারের আসরের সকল পদক।

জাপান অলিম্পিক কমিটি এপ্রিল ২০১৭ থেকে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেইন চালায়। সে ক্যাম্পেইনে জাপানীরা নিজেদের পুরোনো বৈদ্যুতিক জিনিস অকাতরে সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন। ২ বছরে পুরো দেশ থেকে ৫০০০ ব্রোঞ্জ, রূপা এবং স্বর্ণ পদক তৈরির সমতুল্য নষ্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্র সংগ্রহ করেছে। প্রায় ৮০ টন নষ্ট মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে উৎপাদিত হয়েছে ৭০ পাউন্ড সোনা, ৭৭০০ পাউন্ড রূপা এবং ৪৮৫০ পাউন্ড ব্রোঞ্জ।

নষ্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্র সংগ্রহ করা ছিলো পদক তৈরির প্রথম পর্যায়। এরপর এগুলো গলিয়ে পদক বা মেডেলে পরিণত করতে আরো অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়েছে।

এই পদকের নকশা তৈরির জন্য জাপান এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলো। সারাবিশ্ব থেকে পেশাদার প্রায় ৪০০ ডিজাইনার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়ে পদকগুলো ডিজাইন করেছে জুনিচি কাওয়ানিশি।

পদক তৈরির ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি সংক্ষেপে IOC নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণ পদকে ১ গ্রাম সোনা রাখতেই হয়। এগুলোর ব্যাস হয় ৬০ মিলিমিটার এবং বেধ হয় ৩ মিলিমিটার।

পদকের পাশে থাকে গ্রিকদের বিজয়ের দেবী নাইকির ছবি, ১৮৯৬ সালে প্রথম যে স্টেডিয়ামে অলিম্পিকের আসর বসেছিলো সেই প্যানাথেনাইক স্টেডিয়ামের ছবি থাকাটাও বাধ্যতামূলক। বাদ দেয়া যাবে না অলিম্পিকের পাঁচ রিংয়ের অফিসিয়াল লোগো। গেমের নামের সাথে থাকে যেখানে অলিম্পিকের খেলা হচ্ছে সেই শহরের নাম।

টোকিও অলিম্পিকের পদক তৈরির আরেক বৈশিষ্ট্য হল, এর উপাদান যেমন হাল্কা, তেমনি উজ্জ্বল। অলিম্পিক সংশ্লিষ্টদের দাবি, এই উজ্জ্বলতা কখনই ম্লান হয়ে যাবে না। এটা একদিক থেকে প্রতিযোগিদের অম্লান দক্ষতার পরিচয় বহন করবে। এর যে ফিতা সেটার বুননে ব্যবহৃত হয়ে জাপানের ঐতিহ্যবাহী বুনন কৌশল, আর রয়েছে সিলিকন। পদক স্পর্শ করলেই ফিতাটি কোন পদকের। অর্থাৎ মেডেল ছাড়া ফিতাই বলে দেবে সে সোনা, রূপা না ব্রোঞ্জ পদক বহনকারী।

অলিম্পিক মশাল তৈরি হয়েছে ২০১১ সালে জাপানে ভূমিকম্পের পর অস্থায়ী বাসস্থানের নির্মাণ কাজের পর ফেলে দেওয়া টুকরো আ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। টোকিও অলিম্পিক আয়োজনে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে তা উৎপাদিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পুড়িয়ে। আর মশাল বহনকারীর পরিধেয় পোশাকটি তৈরি হয়েছে সমুদ্র থেকে উত্থিত প্ল্যাস্টিকের বর্জ্য দ্বারা।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *