ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যে ৯ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। তেমন কোনো সমস্যার কথা কেউ বলেননি; উপরন্তু মহামারীর এই সময়ে নিজেদের সুরক্ষিত ভাবছেন তারা। বাংলাদেশ প্রথম দিকেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনে তা প্রয়োগ শুরু করেছে।

এই টিকা ‘নিরাপদ এবং অধিকাংশের ক্ষেত্রে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারে’ বলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে। আট সপ্তাহের ব্যবধানে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে সবাইকে। গত ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় কয়েকশ জনকে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে শুরু হয়েছে টিকাদান। রোববার পর্যন্ত ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৩ জন টিকা নিয়েছেন।

২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেনোরিকা কস্তার শরীরে প্রয়োগের মাধ্যমে শুরু হয় দেশের টিকাদান কার্যক্রম।

যে কোনো টিকার সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার পরও ৪২৬ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। তবে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

২৮ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিয়েছিলেন ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ নুরুল্লাহ। তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টিকা নেওয়ার পর প্রথম দিন সামান্য জ্বর হয়েছিল তার। এরপর আর কোনো সমস্যা অনুভব করেননি। “প্রথম দিনে হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা হয়েছিল। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি। আমি ভালো আছি। আমার জানামতে আরও যারা টিকা নিয়েছেন, তাদেরও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।”

৯ ফেব্রুয়ারি মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে টিকা নেন ঢাকার গোপীবাগের বাসিন্দা আবদুর রহমান। ষাটোর্ধ এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে স্ত্রী, বোনসহ পরিবারের আরও চারজন টিকা নিয়েছেন। আবদুর রহমান বলেন, “সুঁই দেওয়ার সময় হালকা একটু ব্যথা হয়েছিল। এছাড়া আমার আর কোনো সমস্যা হয়নি। টিকা নেওয়ার পর রাতে একজনের জ্বরজ্বর ভাব ছিল, খাওয়ার পর এখন সুস্থ্ আছে।”

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহাদাতুল ইসলাম টিকা নেন ১০ ফেব্রুয়ারি। টিকা নেওয়ার আগে যেমন ছিলেন, পরেও তেমনই আছেন তিনি। শাহাদাত বলেন, “আল্লাহর রহমতে টিকা দেওয়ার পর আমার কোনো ধরনের সিম্পটম নেই। আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমন আছি, সুস্থ আছি। কোনো ধরনের সমস্যা নেই।”

১০ ফেব্রুয়ারি মুগদা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে টিকা নেন মাণ্ডা এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না সরকার। তিনি বলেন, “আমি আর আমার স্বামী একসঙ্গে টিকা নিয়েছি। টিকা নিয়ে সে অফিসে চলে গেছে। আমি বাসায় চলে আসি। আমাদের দুজনের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আমরা একদম স্বাভাবিক আছি।”

১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বাতজ্বর ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে টিকা নেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী মাহমুদুর রহমান। সকালে টিকা নেওয়ার পর সারাদিন অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন তিনি। রাতে নিজে গাড়ি চালিয়ে ঢাকার বাইরেও গিয়েছিলেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, “এই টিকা নিয়ে দুই ধরনের প্রচারণা ছিল। আমি সঠিক তথ্যটি জেনেই টিকা নিয়েছি। টিকা দিতে শরীরে সুঁই ঢোকানোর সময় আমি বুঝিনি। সেখানে আধাঘণ্টা বসে থেকে অফিসে গেছি। এখনও হাতে কোনো ব্যথা নেই।”

“সারা পৃথিবী যেখানে ভীত, আমার তো সুরক্ষিত রাখতে হবে,” টিকা নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন মাহমুদুর।

টিকা নিলেন, অভয় দিলেন তারা

সাংবাদিক কামাল হোসেন তালুকদার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দেশে সংক্রমণ শুরুর পর গত প্রায় ১ বছর ধরে করোনাভাইরাস শব্দটা শুনলেই একটা আতঙ্ক কাজ করত তার মনে। তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার পর এখন আর কোনো ভীতি কাজ করে না। “আমি টিকা নিয়েছি ৮ ফেব্রুয়ারি। টিকা নেওয়ার পর মনে একটা সাহস এসেছে, এখন করোনাভাইরাস ধরবে না। টিকা নেওয়ার দিন হালকা ঘাড় ব্যথা, মাথা ধরেছিল। পরে একটা নাপা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।”

পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বাসিন্দা ফারুখ আহমেদ টিকা নিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে। তিনি জানান, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে কোনো ভয় পাননি। কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে তার বোন আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর ভেঙে পড়েছিলেন। ফারুখ বলেন, টিকা নেওয়া নিয়ে কোনো দ্বিধা কাজ করেনি তার মনে। টিকা নেওয়ার আগে-পরের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখেননি।

“সকালে টিকা নেওয়ার পর আজিজ সুপার মার্কেটে নাস্তা করেছি। সারাদিন ব্যবসার কাজ করে রাতে বাসায় ফিরেছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *