অপরাধ ও দূনীতি

টার্গেট করোনার টিকাপ্রার্থী, প্রতারণার কৌশল খুদে বার্তা

কম সময়ের মধ্যে দ্রুত করোনার টিকা দেওয়ার নাম করে বিদেশগামীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতো একটি চক্র। এই কাজে তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করতো। এরপর বিদেশগামী টিকা প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মোবাইলফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিপুল পরিমাণ হাতিয়ে নিতো।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-এর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য জানান।
এর আগে, বুধবার(১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। আটক ব্যক্তির হলো, মো. নুরুল হক (৪৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), দুলাল মিয়া (৩৭) ও মো. ইমরান হোসেন (২৩)।
সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রতারক চক্রটি জানায়, টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে ভ্যাকসিনের এসএমএস নিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করে তারা। খুদে বার্তা ছড়িয়ে প্রচারণা চালিয়ে তারা এই অর্থ আত্মসাৎ করতো। এসএমএস পাঠিয়ে দেওয়ার নামে টিকা প্রতি আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।
র‌্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, সাইফুল ও ইমরান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ভিকটিমদের এসএমএম দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতো। এরপর প্রার্থীদের নিয়ে যাওয়া হতো চক্রটির সর্দার নুরুল হকের কাছে। নুরুল হক ভিকটিমের সঙ্গে টাকা নিয়ে দর কষাকষি করতো। টাকার পরিমাণ নিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে বোঝাপড়া হয়ে গেলে, তাদের নিয়ে যাওয়া হতো দুলালের কাছে। টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে দুলাল ভুক্তভোগীদের এসএমএস পাওয়ার সম্ভাব্য সময় জানিয়ে দিতো।
টার্গেট করোনার টিকাপ্রার্থী, প্রতারণার কৌশল খুদে বার্তা
(র‍্যাব)-এর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিফ্রিং করছেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিশেষত বিদেশগামী যাত্রীরাই ছিল এই চক্রের মূল টার্গেট। চক্রটি রাজধানীর মুগদা, শাহবাগ, রমনা, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, মহাখালী ইত্যাদি এলাকায় প্রতারণা চালিয়ে যেতো। এভাবে চক্রটি দুই শতাধিক বিদেশগামীকে প্রতারিত করেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এসএমএসের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠাতো বিদেশগামীদের। তাতে লেখা থাকতো, ‘যারা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করছেন কিন্তু এসএমএস পাইতেছে না, তাদের ১ দিনে টিকা নিয়ে দেওয়া যাবে। যারা নতুন তাদের ৪ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিয়ে দেওয়া যাবে।’
আটক নুরুল হক দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিল। ২০১৮ সালে দেশে ফিরে ভিসা জটিলতায় আর যেতে পারেনি। ইমরান হোসেন একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করে। সাইফুল ইসলাম রমনা এলাকার চা-বিক্রেতা। সে একটি সরকারি সংস্থায় আউটসোর্সিং হিসেবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিল। ওই সময় ফরম পূরণের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয় সে। মো. দুলাল মিয়া একটি হাসপাতালের আউটসোর্সিং চালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। প্রতারকদের অবস্থান ও পেশার কারণে বিদেশগামীদের সঙ্গে দ্রুত ও সহজে যোগাযোগ হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আটক দুজন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে তাদের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। প্রতারকদের কাছ থেকে ২-৩ জনের তথ্য পেয়েছি। যাদের মাধ্যমে হয়তো ১০-১৫টি ম্যাসেজ তারা পাঠাতে পেরেছে। তদন্তে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

/জেড এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *