আন্তর্জাতিক

জ্যাকব জুমার মুক্তি আন্দোলনে গুলিতে নিহত ৬

দক্ষিণ আফ্রিকার কারাদণ্ড প্রাপ্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমার মুক্তি আন্দোলন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ২৭ বছরের ইতিহাসে জুমা মুক্তির আন্দোলন সবচেয়ে ভয়াবহ আন্দোলন হিসাবে রূপ নিয়েছে।
দেশটির কোয়াজুলু নাটাল প্রদেশ থেকে চারদিন আগে শুরু হওয়া আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে হাউটেং (জোহানেসবার্গ) প্রদেশে। জ্যাকব জুমার সমর্থক, ক্ষমতাসীন এএনসি সরকারের একটি গ্রুপ এবং দেশটির বৃহত্তর জুলু সম্প্রদায়ের লোকজন একএিত হয়ে দুই প্রদেশে ভয়াবহ আন্দোলন, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে।

রোববার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দুই প্রদেশে জ্বালিয়ে দিয়েছে বেশকিছু বিলাসবহুল শপিংমল এবং ভাংচুর ও লুটপাট করেছে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ডারবান ও জোহানেসবার্গে এখনো কৃষ্ণাঙ্গ হামলা ভাংচুর ও লুটপাট অব্যহত রেখেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করলেও কৃষ্ণাঙ্গদের থামানো যাচ্ছে না। তবে পুলিশ দাবি করেছে, চারদিন ধরে আন্দোলন, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ৬২ কৃষ্ণাঙ্গকে গ্রেফতার করেছে এবং গ্রেফতার অভিযান অব্যহত রেখেছে। পুলিশের গুলিতে জোহানেসবার্গ ৬ কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হয়েছেন।

সম্প্রতি আদালত অবমাননার দায়ে দেশটির সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক ১৫ মাসের দণ্ডপ্রাপ্ত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমা। দণ্ডাদেশের পর জুমা কারাগারে না যেতে বিভিন্ন আইনী কৌশল অবলম্বন করে ব্যর্থ হওয়ার পর গত বুধবার রাতে আত্মসমর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমা কারাবরণের পর থেকে তার সমর্থক, ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশ বৃহত্তর জুলু সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রিত হয়ে জুমা মুক্তির আন্দোলন শুরু করে। দাবি আদায় করতে আন্দোলনকারীরা দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিং মলে হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালাতে থাকে।
জুমা সমর্থকরা ইতিমধ্যে দেশটির বেশ কয়েকটি মহাসড়ক ভাঙচুর করে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে। দুইদিনে আন্দোলনকারীরা পণ্যবাহী ২০ ট্রাকসহ বেশকিছু যানবাহন আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভাঙচুর করেছে অসংখ্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আন্দোলনকারীরা জ্যাকব জুমার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন অব্যহত রাখার হুমকি দিয়েছে।
অপরদিকে দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাপোসা রোববার জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে আন্দোলনের নামে সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও ধ্বংসকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। দেশটির পুলিশ মন্ত্রী ব্যাকিব চিলি আজ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমার মুক্তির নামে দেশে যারাই অরাজকতা সৃষ্টি করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে৷ মন্ত্রী বলেছেন, ইতিমধ্যে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।

এই দিকে দুই প্রদেশে ভয়াবহ হামলার কবলে পড়েছে দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে বসবাস করা হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক। জোহানেসবার্গ এবং ডারবানে ইতিমধ্যে দুই শতাধিক বাংলাদেশির দোকানপাট লুট হয়ে গেছে। আরো অসংখ্য বাংলাদেশি হামলা ও লুটপাটের আশংকায় নিজেরা দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলেছে। আরো অসংখ্য বাংলাদেশি হামলা ও লুটপাটের আশংকায় দিনাতিপাত করছে।
অপরদিকে কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের পুলিশ কমিশনার নাহলানহলা মাখওয়ানাজি বলেছেন, সহিংসতা বন্ধে ইতোমধ্যে প্রদেশের সমস্ত জেলা থেকে সকল দাঙা পুলিশকে একএিত করা হয়েছে। গত দুই দিনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি নাথুথুকো মেলংগো সহিংসতা ও বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শেষ হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *