আন্তর্জাতিকজাতীয়সর্বশেষ

জ্বালানি, সয়াবিন, পাম তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি

জ্বালানি, সয়াবিন, পাম তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি

বর্তমান সময়ের সাথে জ্বালানি, সয়াবিন, পাম তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে অস্থির আন্তর্জাতিক বাজারে। জ্বালানি তেলের দাম গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বেড়েছে সোনার দামও। এ সব কিছুর ঢেউ এসে লাগছে দেশের বাজারে।

এরই মধ্যে অস্থিতিশীল সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গম ও ভুট্টার মতো কৃষিপণ্যের দাম।
আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই বাজার পরিস্থিতি বদল হচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন আমদানিনির্ভর শিল্পের মালিকরা, খাদ্যপণ্য উৎপাদকরা।

করোনা মহামারির কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় সয়াবিন ও পাম তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ইউক্রেন সংকটের পর দাম আবার বেড়েছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতি টন ক্রুড পাম অয়েলের দাম ছিল এক হাজার ২৬৭ ডলার। দুই দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি তা এক হাজার ৩৪৪ ডলারে উঠে যায়। স্পট মার্কেটে টনপ্রতি দাম ছিল আরো বেশি, এক হাজার ৩৯০ ডলার। গত কয়েক দিনে এই দাম আরো বেড়ে দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি চলে গেছে বলে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন।

বর্তমান বাস্তবতায় ভোজ্য তেলের দাম কিছুটা বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। গত শনিবার টাঙ্গাইলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমদানি করে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে হয়। কিন্তু এর দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় দাম কিছুটা না বাড়ালে আমদানি উৎসাহিত হবে না। তাতে বাজারে প্রভাব পড়বে।

ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ দিনে শুধু সয়াবিন ও পাম তেলের দাম টনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাম তেলের দাম। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে এ সময়ে আর দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে দাম সমন্বয় করার বিকল্প নেই।

ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের বাজারেও। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১১৫ ডলার, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত জানুয়ারিতেও ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ৬০ ডলারের কাছাকাছি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়তে পারে।

যুদ্ধকালীন সংকটের কারণে বেড়েছে সোনার দামও। এরই মধ্যে মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়ে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মূল্যবান এ ধাতুর চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও বাড়ছে।

মার্কেটস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সোনার দাম ১.৯৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯৭৪ ডলার ৫০ সেন্টে। ব্লুমবার্গ বলছে, ওই দিন স্পট মার্কেটে সোনার দাম ১.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স এক হাজার ৯৭০ ডলার ৭০ সেন্ট, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষি ও ভোগ্য পণ্যের দাম। যুদ্ধ শুরুর আগেই আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যুদ্ধের কারণে দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা। মানভেদে টনপ্রতি গমের দাম এরই মধ্যে ৪০০ ডলার থেকে বেড়ে ৫০০ ডলার অতিক্রম করেছে। কানাডা থেকে আমদানি করা গমের দাম টনপ্রতি ৫২০ ডলারে উঠেছে। ভারতীয় গমের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। আমদানিনির্ভর হওয়ায় দেশেও গম-আটার দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব পাড়তে পারে।

জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধের প্রভাবের বাইরে নয়। তবে সরকারিভাবে গম আমদানিতে সমস্যা না হলেও বেসরকারি খাতে কিছু সমস্যা হতে পারে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে আমদানিকারকরা আর্জেন্টিনা ও ভারত থেকে আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করবে। চাহিদা বাড়লে ওই দেশগুলোও দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। দামের এই প্রভাব আমদানিকারক দেশ হিসেবে দেশের বাজারে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *