অর্থনীতি ডেস্ক, ধূমকেতু বাংলা: আমরা প্রতিনিয়ত যারা বাজার করি বিশেষ করে কোনো উপলক্ষে যখন বাজার করা হয়, তখন সাধারণত ফর্দ বা তালিকা তৈরি করে নিয়ে যাই। ফর্দ ছাড়া বাজারে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু কেনার কথা ভুলে যাই। ঠিক সে রকম ঘটে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন তৈরির ক্ষেত্রে। প্রায়ই দেখা যায়, তালিকা বা ফর্দ না করায় আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাকমতো গুছিয়ে নেওয়া যায় না। একেবারে শেষ সময় প্রয়োজনীয় কাগজ বা ছাড়াই রিটার্ন তৈরি হলে তা ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পরও ফাইল আবার উন্মোচন হতে পারে। আয়কর আইনে ছয় বছর পর্যন্ত আয়কর ফাইল পুনরায় উন্মোচন করা যায়। অর্থাৎ আয়কর ফাইলে ত্রুটি থাকলে বিপদ থাকবে ছয় বছর পর্যন্ত।
সুতরাং একটি তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী কাগজপত্র গুছিয়ে রিটার্ন তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আয়কর বিষয়ে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে একটি ফর্দ বা তালিকা তৈরি করেছেন আয়কর আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম যা করদাতাদের উপকারে আসতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক ফর্দটি-
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য যা যা দরকার
আয়ের বিবরণী
১. বেতন খাতে আয় (ফটোকপি সংযুক্ত করবেন)
২. সিকিউরিটির ওপর সুদ খাতে আয় (উপযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত বেতন সার্টিফিকেট, অর্জিত সুদের স্বপক্ষে ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট)
৩. গৃহ সম্পত্তি খাতে আয়
ক. গৃহের তলাভিত্তিক ফ্লোর স্পেস ও ভাড়া (ভাড়ার চুক্তিপত্র)
খ. পৌরকরের পরিমাণ (পৌরকর প্রদানের রসিদ)
গ. বন্ধকি ঋণের ওপর সুদ (ব্যাংকের ইস্যুকৃত বিবরণী বা সার্টিফিকেট)
ঘ. বাসস্থান খালি থাকলে তার সময়কাল (উপ-কর কমিশনারকে জানানো হলে পত্রের কপি)
৪. কৃষি আয়
ক. কৃষিজমির পরিমাণ
খ. ফলনকৃত শস্যের পরিমাণ
গ. বাজারমূল্য
৫. ব্যবসা বা পেশা খাতে আয় (স্থিতিপত্র ও আয়-ব্যয়ের বিবরণী, যদি থাকে)
৬. মূলধনি লাভ
ক. মূলধনি সম্পদের বিক্রয়মূল্য (বিক্রীত চুক্তিপত্র ও বিক্রয়ের রসিদ বা দলিল)
খ. বিক্রীত সম্পদের ক্রয়মূল্য (ক্রয়ের দলিল অথবা প্রমাণপত্র)
গ. আনুষঙ্গিক মূলধনি ব্যয় (ক্রয় ও আনুষঙ্গিক মূলধনি ব্যয়ের প্রমাণপত্র)
৭. অন্যান্য উৎস খাতে আয়
ক. লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট)
খ. সুদ (সার্টিফিকেট সুদের ওপর উৎসে কর কর্তনের এবং ব্যাংক বিবরণী)
গ. অন্য কোনো উৎস (আয়ের সপক্ষে প্রমাণপত্র)
ঘ. এফডিআর বা সঞ্চয় (বিবরণীসার্টিফিকেট)
কর রেয়াতের জন্য বিনিয়োগ
১. জীবনবিমার প্রদত্ত কিস্তি (প্রিমিয়ার রসিদ)
২. ভবিষ্যতে প্রাপ্য বার্ষিক ভাতা প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে চাঁদা (উপযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট)
৩. ভবিষ্য তহবিল আইন, ১৯২৫ অনুযায়ী প্রযোজ্য ভবিষ্য তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা (সার্টিফিকেটের ফটোকপি)
৪. স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে স্বীয় ও নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত চাঁদা (সার্টিফিকেটের ফটোকপি)
৫. অনুমোদিত বয়সজনিত তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা (নিয়োগকর্তার সার্টিফিকেট)
৬. অনুমোদিত ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার স্টক, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগ (বিনিয়োগের প্রমাণপত্র)
৭. ডিপোজিট পেনশন স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা (ব্যাংকের সার্টিফিকেট সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ অনুমোদনযোগ্য)
এসব ক্ষেত্রে ২০২১-২২ কর বছরের জন্য ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ তারিখের মধ্যে সংঘটিত কার্যক্রমের কাগজ দলিলাদি কি না, সে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।
রিটার্ন তৈরি করে স্বাক্ষর করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সংযুক্ত করার পর রিটার্নসহ কাগজপত্রের ফটোকপি করে ফাইলে সংরক্ষণ করুন। তাহলে পরবর্তী রিটার্ন তৈরি করা এবং যদি কোনো কারণে আয়কর ফাইল অডিটে নির্বাচিত হয় বা কোনো তদন্ত করা হয়, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে সুবিধা হবে।
আরো পড়ুন:
আয়কর রিটার্নে যা লিখবেন এবং যেভাবে জমা দেবেন