স্বাস্থ্য

জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ

নিখিল মানখিন, ধূমকেতু ডটকম: দেশে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সফল করতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, করোনা পূর্বকালীন স্বাভাবিক সময়ের মতো চলাফেরা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করছেন সাধারণ মানুষ। মানা হচ্ছে না লকডাউন। লোকজনের স্বাভাবিক চলাফেরায় মনে হবে করোনার দিন শেষ হয়ে গেছে। অথচ  বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা, বিভিন্ন জরিপ, দৈনিক রোগী শনাক্তের উচ্চ হার ও মৃতের সংখ্যা  দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ এখনও করোনার প্রবল থাবা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে বাংলাদেশ এখন বের হয়ে আসতে পারেনি। সারাদেশ করোনায় ছেয়ে গেছে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দৈনিক মৃতের সংখ্যা  ২০০ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মোট রোগী শনাক্তের বিপরীতে মৃতের হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশে পৌঁছে গেছে, যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকেও (১ দশমিক ৩১ শতাংশ) ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক মাস ধরে এদেশে করোনার তাণ্ডব চলছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা পূর্বকালীন অবস্থা : দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানা লোকের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালনকারী মানুষের সংখ্যা হিসাব করাটাই সহজতর হয়ে উঠেছে। করোনার মহামারীতেও বাংলাদেশের অবস্থা যেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগের পরিবেশ ফিরে এসেছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মানসিকতা ও সচেতনতা অনেক আগেই উঠে গেছে। খোদ রাজধানীতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, মুখে মাস্ক ব্যবহারীর সংখ্যা প্রত্যাশিত মাত্রায় নেই।

জীবনের মূল্য নিজেদেরই বুঝতে হবে : বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ভার নিজেদেরই নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ মুস্তাক হোসেন। তিনি  ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিধি-নিষেধসমূহ শিথিল করেছে সরকার। পরিস্থিতির প্রয়োজনেই বর্তমানে দেশব্যাপী ঘোষণা করা হয়েছে কঠোর লকডাউন। করোনা সম্পর্কে দেশের মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মেছে। করোনা প্রতিরোধের বিষয়সমূহও অজানা থাকার কথা নয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিজেদেরই করে নিতে হবে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, করোনা মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। বিশ্ব ও দেশের করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমেও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই সরকারী নির্দেশনাসমূহ পালনের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারেন দেশের মানুষ।

শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে দেশের প্রত্যেক মানুষকে আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্ববান হতে হবে। সরকারের একার পক্ষে করোনা মোকাবেলায় সফলতা বয়ে আনা সম্ভব নয়। একজন মানুষের জীবনযাপনের প্রতিটি মুহূর্ত বিধি-নিষেধ ও নির্দেশনার মাধ্যমে মনিটরিং করা সম্ভব নয়। নিজেদের জীবনের মূল্য নিজেদেরই বুঝতে হবে।

লকডাউন পালন ও স্বাস্থ্যবিধি পালন করার উপর জোর দিয়ে করোনাবিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই দেশে টানা দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছে টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি, যা ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে। কিন্তু লকডাউনে পালনে সহযোগিতা করছে না সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধি পালন করার ক্ষেত্রেও তারা সচেতন মনে হচ্ছে না। কিন্তু নিজের ও অন্যের জীবন বাঁচাতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে জানান ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *