প্রচ্ছদ

জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে প্রত্যয়ী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো নারী উদ্যোক্তারা

নিখিল মানখিন, ধূমকেতু ডটকম: বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসব বিশেষ করে ঈদের মাস এলেই বাড়তি আনন্দে ভরে উঠে বিউটি পার্লারের মালিক ও বিউটিশিয়ানদের মন। এসময় কাজের চাপ থাকে। এই সেক্টরে যতই কাজের চাপ থাকবে, ততই আয় বেশি হবে। কিন্তু গত বছর করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই স্থবির হয়ে পড়েছে এই সেক্টর। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পার্লার, চাকরি হারিয়েছেন শত শত বিউটিশিয়ান। এমন পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়েননি অনেক বিউটি পার্লারের মালিক, গারো নারী উদোক্তারা। পুরো সঞ্চয় ও সহায় সম্পত্তির বিনিময়ে গড়ে তোলা পার্লারগুলো তারা নিজেদের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন। করোনামুক্ত বাংলাদেশ এবং নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা। এই সেক্টরের ৮০ শতাংশ কর্মীই (বিউটিশিয়ান) গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ গারো বিউটি পার্লার ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।  

জীবিকার্জনে গারো নারীরা সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য সেবার খাতে নিয়োজিত থাকলেও আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর মতো গারোদের বড় প্রতিষ্ঠিত কোনো বিউটি পার্লার নেই। অথচ গারো নারীদের শ্রমে-ঘামে চলে এক একটি বিউটি পার্লার। না থাকার এই তাগাদা এবং কর্মসংস্থান তৈরীর লক্ষ্যেই ২০০৭ সালে স্বপ্না আজিম নামের এক গারো নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করেন ‘বৈশাখী বিউটি পার্লার’। রাজধানীর মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট সংলগ্ন এর অবস্থান। ২ জন বিউটিশিয়ান নিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে পার্লারটিতে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ জনে। ময়মনসিংহ ধোবাউড়া চন্দ্রকোনার মেয়ে স্বপ্না আজিম। তিনি দীর্ঘ বাইশ বছর (১৯৯৪-২০১৬) কাজ করেছেন সিটিসেল মোবাইল কোম্পানিতে। ২০০৮ সালে স্বামী মারা যাবার পর একমাত্র মেয়েকে নিয়েই তাঁর দোকলা সংসার। মেয়ে পড়াশোনা করছেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কলেজে।

বাংলাদেশ গারো বিউটি পার্লার ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি  স্বপ্না আজিম। তিনি ধূমকেতু ডটকমকে জানান, সংগঠনটির সাথে ঢাকার অর্ধশত পার্লার যুক্ত আছে। চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকার আশেপাশের গারো মালিকানায় পরিচালিত পার্লার গুলোও আছে যুক্ত হবার প্রক্রিয়ায়। করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু সংখ্যক পার্লার ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে।  করোনা মহামারীর যাঁতাকলে ছোট ছোট অনেক পার্লার বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো পুনরায় সচল করতে সহযোগিতা, আর্থিক প্রণোদনা জরুরি। সরকারের কাছে সেই দাবি জানিয়ে আসছে গারো বিউটি পার্লার ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। নানান বাধা, বিপত্তি কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন স্বপ্ন আজিম।

করোনার কষাঘাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্লারটি পুনরায় চালু করেছেন রাজধানীর গুলশানের দক্ষিণ শাহজাদপুরের  গ্রেস বিউটি পার্লারের(৩২/১) মালিক বেবি দিও। প্রায় ১২ বছর ধরে চলছে পার্লারটি। পার্লারের আয় থেকেই চলে চার সদস্যের সংসার।  বেবি দিও ধূমকেতু ডটকমকে জানান, করোনার কারণে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পার্লারটি বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পার্লারের পুরনো দোকান ছেড়ে দিতে হয়েছে। অনেক কষ্টে চলতি বছরের এপ্রিলে আবার চালু করেছিলাম। কিন্তু চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে আবার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্ব পার্লারটি টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যাবেন বলে জানান বেবি দিও। এভাবে স্বপ্না আজিম ও বেবি দিও’র মতো  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অনেক গারো নারী উদ্যোক্তা করোনাকালীন জীবন সংগ্রামে টিকে আছেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে পার্লারগুলোতে শত শত গারো মেয়ে কাজ করছেন। এরা সিলেট, নেত্রকোনা, মেহেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মধুপুর, ময়মনসিংহ প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দা। দেশের নৃ-গোষ্ঠীর মেয়েরা কাজ করে দক্ষ ও পেশাদার রূপচর্চাকর্মী হিসেবে নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন করেছেন। স্বাবলম্বী হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তারা আজ খুবই ঝুঁকির  মধ্যে আছেন। সরকারকে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে আলাদা প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানান সঞ্জীব দ্রং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *