মাতৃভূমি

রাস্তায় রাস্তায় জিম্মি মানুষের দায় নেবে কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আজও যাত্রীদের জিম্মি করে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আকস্মিক এ ধর্মঘটে সারা দেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। গণপরিবহন না পেয়ে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তারাও শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে আজ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা।

সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি, মোটরসাইকেলে নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে দেখা যায় যাত্রীদের। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় অধিকাংশ অফিস, কলকারখানা বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষাও ছিল শুক্রবার। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু হয় শুক্রবারই। গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েন অসংখ্য পরীক্ষার্থী। গতকাল শনিবারও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা ছিল।

এদিকে ধর্মঘটের নামে যাত্রী জিম্মি করার দায় নিচ্ছে না কেউ। পরিবহন মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তাদের প্রত্যক্ষ মদদে সারা দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি বলছে, জ্বালানি তেলের দাম ২৩% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন তারা।

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আমরা চাই তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক। আর যদি দেশের স্বার্থে দাম বাড়াতেই হয় তাহলে সহনীয় মাত্রার মধ্যে থেকে কতটুকু বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। একবারে লিটারে ১৫ টাকা দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়, এ রকম নজির আমরা কখনো দেখিনি।’

লঞ্চ চলাচল বন্ধ: ডিজেলের মূল্য বাড়ার জেরে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। সমন্বিত কোনো ঘোষণা না দিলেও গতকাল দুপুর থেকে সদরঘাটের বিভিন্ন পন্টুন থেকে লঞ্চগুলো সরিয়ে নেন লঞ্চকর্মীরা। সন্ধ্যানাগাদ সদরঘাট এলাকা পুরোপুরি লঞ্চশূন্য হয়ে পড়ে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর শতভাগ ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত একটি আলটিমেটাম ছিল তাদের। দুপুরের পর কার্যত লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলমান পরিবহন ধর্মঘটে নতুন মাত্রা যোগ হলো।

শুক্রবার থেকেই সারা দেশে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমরা এখনো ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে লঞ্চ মালিকরা লঞ্চ চালাবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই তারা তাদের লঞ্চ সরিয়ে নিচ্ছেন।’

তিনি জানান, তারা শনিবার দুপুর পর্যন্ত সরকারকে যে আলটিমেটাম দিয়েছেন সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাননি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক জানিয়েছেন, লঞ্চ মালিকদের দাবিগুলো নিয়ে তারা রবিবার (আজ) আলোচনা করবেন।

চলছে কেবল বিআরটিসি: গণপরিবহনশূন্য রাজপথে ভরসা ছিল কেবল সরকারি বিআরটিসির বাস। গতকাল ও আজ দিনভর বিআরটিসির ডাবল ডেকার, সিঙ্গেল ডেকার ও আর্টিকুলেটেড বাসগুলোকে যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে চলাচল করতে দেখা গেছে। ফাঁকা রাস্তায় ছোট যানবাহনের কয়েক গুণ ভাড়া আদায়ের জেরে নগরবাসীর জন্য কিছুটা স্বস্তি এনে দেয় সরকারি পরিবহন সংস্থার এসব বাস।

ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজিচালিত ও এসি বাস নিয়ে প্রশ্ন: রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের অধিকাংশই সিএনজিচালিত। অন্যদিকে এসি বাসের ভাড়া বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হারে মালিকরাই নির্ধারণ করেন। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে সিএনজিচালিত ও এসি বাস কেন বন্ধ করা হলো সে প্রশ্ন ঘুরছে দুই দিন ধরে।

পরিবহন নেতারা সাধারণ মানুষ ও সরকারকে জিম্মি করে অতিরিক্ত হারে ভাড়া বাড়ানোর অপকৌশল হিসেবে সব কটি পরিবহনকে আকস্মিক ধর্মঘটে শামিল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবে হঠাৎ ধর্মঘট আহবান করে সারা দেশ অচল করে দেওয়া যায় কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

অন্যদিকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ পণ্য পরিবহন খাতটি কখনো সরকারি ভাড়া নির্ধারণের আওতায় নেই। তারা দরকষাকষি করে প্রতিযোগিতামূলক ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করে। তারাও এবারের ধর্মঘটে শামিল হয়ে তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহারের দাবি তুলছে।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির দাবি: ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা সম্ভব হলে ‘ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্যভাবে’ ভাড়া সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী, অযৌক্তিক ও হঠকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২৩% বাড়ায় মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, খাদ্যপণ্য ও কৃষিজ উৎপাদনসহ সামগ্রিক ব্যয় আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, যদি জ্বালানি তেলের দাম কমানো সম্ভব না হয় তাহলে কিলোমিটারপ্রতি বাস ভাড়া যেন সর্বোচ্চ ১৫ পয়সার বেশি না বাড়ানো হয় তা নিশ্চিত করা উচিত।

আরো পড়ুন:

ভোগান্তি কমাতে আন্তঃনগর ট্রেনে সংযোজন হল আরও ২৬টি বগি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *