নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি স্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। গত দুই মাস ধরে করোনায় আক্রান্ত, শনাক্ত ও মৃতের হার হ্রাস অব্যাহত আছে। দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হার এক শতাংশে এবং মৃতের হার দুই শতাংশে নেমেছে। করোনা রোগী সুস্থতার হার উঠে গেছে ৯৮ শতাংশে। বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর বিবেচনাতেও বাংলাদেশের উন্নতি ঘটেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার, বিশেষ করে মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
দেশের করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা ধূমকেতু বাংলাকে জানান, চলতি বছরের গত পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ১ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬০৪ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ৮৭০ জনের। শনাক্ত হয়েছেন মোট ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৫ জন। পরীক্ষাগারের সংখ্যা বেড়েছে ৮৩৩টিতে উঠে এসেছে।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন :
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা সংগ্রহ ২০২১ সালের ৩ আগস্টে ৫৭ হাজার ২৯৬টি এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ৫ এপ্রিলে ৩২০টি। সর্বোচ্চ পরীক্ষা ২০২১ সালের ৩ আগস্টে ৫৬ হাজার ২৮৪টি এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ২১ মার্চে ৩৬টি।সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত ২০২১ সালের ২৮ জুলাই ১৬ হাজার ২৩০ জন এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ৩০ মার্চে ১ জন। সর্বোচ্চ সুস্থ হয়েছে ২০২১ সালের ৮ আগস্টে ১৬ হাজার ৬২৭ জন এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের পহেলা এপ্রিলে ১ জন।সর্বোচ্চ মৃত্যু ২০২১ সালের ৫ আগস্টে ২৬৪ জন এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ১৮ মার্চে ১ জন। সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ২০২১ সালের ২৪ জুলাই ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ৩০ মার্চে দশমিক ৬৫ শতাংশ।
সর্বোচ্চ সুস্থতার হার ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ২ মে দুই শতাংশ। সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার ২০২০ সালের ২৫ মার্চে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২০২০ সালের ৪ জুলাই ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বয়সভিত্তিক মৃত্যু:
বয়স বিবেচনায় মৃত্যুর শিকার সর্বোচ্চ ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীরা ৮ হাজার ৬৫৩ জন, যা মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১০০ বছরের বেশি বয়সী ৩৪ জন, যা মোট মৃত্যুর শূন্য ১২ শতাংশ। এভাবে পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীর মধ্যে ৭৭ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১৮৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৬৪৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৬৬০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৩০৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬৫৭৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৮৬৫৩ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৮৩৩ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৫৭৫ জন এবং ৯০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ৩৩০ জন।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্ত ও মৃত্যু:
বিভাগভিত্তিক বিবেচনায় এপর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ঢাকা বিভাগে ১২ হাজার ১৫৩ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪৩ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৪৩ জন, যা মোট মৃত্যুর ৩ শতাংশ। জেলা ভিত্তিক বিবেচনায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ৭৮৫৬ জন ও সর্বনিম্ন বান্দরবন জেলায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু যথাক্রমে ঢাকা বিভাগে ৯ লাখ ২৫ হাজার ৩০৭ জন ও ১২ হাজার ১৫৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৪ হাজার ৯৮৯ জন ও ৮৪৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ লাখ ৪১ হাজার ২০৮ জন ও ৫৬৫৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৯৮ হাজার ৬৭৭ জন ও ২০৪৩ জন, রংপুর বিভাগে ৫৫ হাজার ৩৮০ জন ও ১৩৬৩ জন, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬৯ জন ও ৩৫৯৮ জন, বরিশাল বিভাগে ৪৫ হাজার ২২৮ জন ও ৯৪৬জন এবং সিলেট বিভাগে ৫৪ হাজার ৩৯৫ জন ও ১২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের:
বিশ্বের করোনায় জর্জরিত ত্রিশটি দেশের মধ্যে মোট পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার ভিত্তিতে গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে চার ধাপ উন্নতি লাভ করে ৩০তম স্থানে চলে গেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল ২৬তম স্থানে। এই পরিসংখ্যানের হিসেবে অনুযায়ী যে দেশের অবস্থান যত সামনে যাবে, ততই তার অবস্থার অবনতি ঘটার বিষয়টি প্রকাশ পাবে। ২ নভেম্বর বেলা চারটার আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটাররের প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুন:
দেড় বছরের মধ্যে দেশে করোনায় সর্বনিম্ন মৃত্যু