নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: আগামীকাল ৭ এপ্রিল পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ঢাকার তেজগাঁওস্থ তৎকালীন জাতীয় সংসদ ভবনে। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শুরু হচ্ছে বিশেষ অধিবেশন। এটা চলতি একাদশ সংসদের ২২তম এবং এবছরের দ্বিতীয় অধিবেশন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ২১ মার্চ এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অর্ধশত বছর পূর্তির দিনে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অধিবেশন শুরুর আগে আজ সংসদ ভবনে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। কমিটির সভাপতি ও সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্য, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অংশ নেবেন।

স্পিকার জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে দুটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’। বিভিন্ন সময়ে সংসদে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যসমূহের সংকলন এটি। আরেকটি মুজিববর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন নিয়ে সংকলন। আজ কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট উন্মুক্ত করবেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ এই অধিবেশনের মেয়াদ হবে চার কার্যদিবস। সেই হিসেবে আগামী রবিবার বিশেষ অধিবেশন শেষ হবে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আজকের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে।

সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশন সম্পর্কে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ৭ এপ্রিল বিশেষ অধিবেশনের মূল কার্যক্রম শুরু হবে। সেখানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আসবেন, তিনি স্মারক বক্তৃতা দেবেন। পরবর্তী অংশে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী সেটি উত্থাপন ও বক্তব্য রাখার পর সব সদস্য এই আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আলোচনায় আমরা প্রবীণ সদস্য, বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের সংসদের সদস্যদের অভিজ্ঞতা শুনব। ৮ এপ্রিল আলোচনা শুরু হয়ে শেষ দিন পর্যন্ত চলবে। পরে প্রধানমন্ত্রীর আনা প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্তির দিকে যাবে।

১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয় উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘১৯৭৩ সালের ওইদিন সংসদের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে আমরা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি। একারণে ৭ এপ্রিল সংসদের জন্য একটি ?গুরুত্বপূর্ণ দিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন একাদশ জাতীয় সংসদ চলমান। এটা অনেক গৌরবের বিষয়। আমাদের সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এবং স্পিকারও একজন নারী। যেটা দশমের কিছু অংশসহ, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।’

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ছাড়া সংসদের বৈঠক সকালেই শুরু হবে। আজ সকালে শুরু হতে যাওয়া সংসদের বৈঠকে শোক প্রস্তাবসহ নিয়মিত কার্যসূচির মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হবে। স্পিকার জানান, বিশেষ অধিবেশনের আলোচনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তা একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিশেষ অধিবেশন ছাড়াও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী কিছু কিছু অনুষ্ঠান থাকবে বলে জানান ড. শিরীন শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবীণ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক একটি মতবিনিময়ের চিন্তা করছি। সিনিয়র সংসদ সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা সেখানে শেয়ার করবেন। আমরা আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনও করতে চাই। সেটা হয়তো বাজেট সেশনের পরে হবে। সেখানে আমরা অন্যান্য দেশের কয়েক জন স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাব। সেটা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হয়তো হবে।’ উল্লেখ্য, এর আগে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশেষ অধিবেশন হয়েছিল। তখনো বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মারক বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ঐ দিনও জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে সংসদে সাধারণ প্রস্তাব এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে, সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পুরো সংসদ ভবন এলাকায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সংসদ ভবনের ভেতরে-বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। করোনার প্রকোপ এখনো থাকায় বিশেষ অধিবেশনটিও হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। অনুমোদিত যারা সংসদ ভবনে প্রবেশ করবেন, তাদের প্রত্যেককেই ইতিমধ্যে করোনা পরীক্ষা করাতে হয়েছে। যাদের ফল নেগেটিভ, কেবল তারাই সংসদ ভবনে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।

এম/

আরো পড়ুন:

বৈশ্বিক-স্বতন্ত্র দেশের প্রচেষ্টা সুসংহত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *