নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: দেশের সর্বোচ্চ আইনসভা জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ৭ এপ্রিল শুক্রবার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও প্রথম সংসদ গঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে। এই সংসদের প্রথম দিনের বৈঠক বসে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। সে হিসাবে আজ জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী।
এর আগে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গঠিত হয় গণপরিষদ। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম বৈঠক বসে। গণপরিষদের মেয়াদ ছিল ৮ মাস ৫ দিন। মাত্র দুই অধিবেশনে ২১ কার্যদিবসে সে সময় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গণপরিষদে।
স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট ১১টি সংসদে ১৬ বার সংবিধানে নানা ধরনের পরিবর্তন আনা হলেও বাহাত্তরের মূল সংবিধানে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের।
জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্মারক বক্তৃতা দেবেন সংসদের বৈঠকে। তাঁর বক্তব্যের ওপর দুই দিনব্যাপী আলোচনার পরে আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে এই বিশেষ অধিবেশন। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ ও ‘মুজিববর্ষ বিশেষ অধিবেশন’ নামে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। কমিটির সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
এদিকে বিশেষ অধিবেশন উপলক্ষে পুরো সংসদ এলাকা এরই মধ্যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আজ রাষ্ট্রপতির ভাষণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিশিষ্টজনকে। গতকাল এ বিষেয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী আরও কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। স্পিকার বলেন, ‘৫০ বছরে সংসদের পথচলার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের অনেক জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক কিছু দেখতে হবে। তার প্রতিফলন ঘটিয়ে সামনের দিকে যেতে হবে।’
সংসদকে কার্যকর করতে স্পিকারের ভূমিকা প্রশ্নে ড. শিরীন শারমিন বলেন, ‘সংসদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সংসদ কার্যকর থাকবে। বিরোধী দলকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে, তাদের কথাগুলো বলার সুযোগ দেওয়া গেলে সংসদ পরিচালনায় সাধারণত অসন্তোষ তৈরি হবে না। কোনো দলের কোনো সদস্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা উপেক্ষা করা হলে এবং স্পিকার পক্ষপাতদুষ্ট হলে সদস্যরা আস্থা হারাবেন। এ জন্য স্পিকারের বিশেষ কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা তাঁকে খুব সচেতনভাবে পালন করতে হয়। অনেক ধরনের চাপ স্পিকারকে অনুভব করতে হয়। সে চাপ সহ্য করে নিয়ে ব্যালেন্স করতে হয়। এভাবে ব্যালেন্সিংয়ের জায়গা স্পিকারকে বুঝতে হয়।’
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে– উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘৫০ বছরের সময়কালের সব সময় যাত্রাটা মসৃণ ছিল না। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাহাত্তরের সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সামরিক ফরমান জারি করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। সংবিধানের মূল জায়গাগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল।’
এম/আইকেজে
আরো পড়ুন: