জাতীয়

জাতিকে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, জানিয়ে জাতিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘এখনও যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তি এবং ১৫ আগস্টের খুনি, মৃত‌্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব‌্যক্তিদের সন্তান, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর এবং বংশধররা কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যে আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের কিছু কিছু এদের মদদ দিয়ে থাকে। কাজেই এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ‌্যমে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর, সেই ১৯৭২ সাল থেকেই কিন্তু চক্রান্ত শুরু। সেই চক্রান্ত মোকাবিলা করেই বাংলাদেশকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।’
‘যখন পরাজিত শক্তি দেখল যে, আর বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখা যাবে না, তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের হত‌্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তারা। এ কথা মনে রেখেই আমাদের পথ চলতে হবে যে, আমাদের পায়ে পায়ে শত্রু আছে পদে পদে বাধা আছে। আমাদের চলার পথ মসৃণ না, কণ্টাকাকীর্ণ। আমাদের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি আদায় করা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য পদ লাভ করা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ তৈরি করে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্টের পরে জিয়াউর রহমান আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেয়নি। আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে, আমি একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসি। তখন অনেক বাধা দেওয়া হয়েছিল। অনেক ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যখন আমি দেখেছি, আমার দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি একটা সুযোগ পাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করার। তখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও সাড়া পেয়েছি বিপুলভাবে। কাজেই আমি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’ ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে বিদেশে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে দেশে ফিরে আসার স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সফল করতে হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়েই কিন্তু আমি ফিরে এসেছিলাম।’
দেশে ফিরে আসার পর তৎকালীন স্বৈরশাসকদের বিভিন্ন বাধার কথা উল্লেখ করে তাদের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন এই ধানমন্ডির-৩২ নম্বর খুলে দেয়নি। যেতে দেয়নি। আর এই নামটা তো মুছেই ফেলে দিয়েছিল।’ 
জাতির পিতার বাণী—বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস, এ কথা উল্লেখ করে তা সবাইকে মনে রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাধা-বিঘ্ন আসতেই থাকবে। কিন্তু সৎ পথে থাকলে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং আদর্শ নিয়ে যদি চললে যেকোনো কঠিন পথ পাড়ি দিয়েও সাফল্য অর্জন করা যায়। তবে, এটাও ঠিক, সত্যের পথ সব সময় কঠিন হয়। সেই কঠিন পথকে যারা ভালবেসে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে পারে, তারাই সাফল্য আনতে পারে।’
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন—আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের শহীদ সদস‌্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রকাশনা পত্রিকা ‘মাতৃভূমি এবং জয় বাংলা’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

/জেড এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *