ডেস্ক নিউজ, সুখবর ডটকম: ১৯৬০ এর দশকের পর প্রথমবারের মতো জনসংখ্যা হ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে চীন। বর্তমানে চীনা তরুণ প্রজন্ম সন্তান গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছে। চীনের জনসংখ্যা পরিকল্পনা উদ্যোগ এক শিশু এক নীতি, এর আলোকে চীনা পরিবারগুলো একের অধিক শিশু গ্রহণ করতে পারছিলো না। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যে, চীনা নাগরিকেরা একটি শিশুই গ্রহণ করতে আর রাজি নয়। এমনকি অনেকে সন্তান না নেওয়ার জন্য অবিবাহিত থাকতেও রাজি।

চীনের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শহর বেইজিং এবং সাংহাইয়েই জনসংখ্যা হ্রাস পরিলক্ষিত। এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর হংকংয়েও জনসংখ্যা খুব দ্রুত হ্রাস পেতে চলেছে। এ শহরগুলোতে জন্মহারের পরিমাণ কমছে এবং বয়স্ক জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে চীন এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এই বহুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে চীন। তাই কোভিড পরবর্তী সময়ে এই জনসংখ্যা হ্রাসের বিষয়টি চীনের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

গত দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বেইজিংয়ের জনসংখ্যা মাত্র এক বছরে ৮৪,০০০ কমে ২০২২ সালে ২১৮.৪ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মৃত্যুহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রতি হাজার জনে ৫.৭২ জন। জন্মহার কমেছে ৬.৬৭ এ। কোভিড মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাংহাইয়ে জনসংখ্যা ১৩৫,৪০০ কমে ২৪৭.৬ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। হংকং এর জনসংখ্যা টানা তৃতীয়বারের মতো কমেছে। ২০২২ সালে আরও এক শতাংশ কমেছে এর জনসংখ্যা। ২০২২ সালে হংকংয়ে ২৯,০০০ জন জন্মগ্রহণ করেছেন এবং মারা গিয়েছেন ৬২,১০০ জন।

চীনা নারীবাদী কর্মী লু পিন জানান, চীনের তরুণ প্রজন্ম সন্তান গ্রহণে আগ্রহী নয়। তারা সন্তান ধারণকে অনিবার্য হিসেবে দেখছে না। সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের তরুণ প্রজন্ম তাদের জীবনাচরণকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এবং সন্তান গ্রহণের জন্য বিয়েকে পূর্বশর্ত হিসেবে তারা মানতে নারাজ। ফলে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহুল সমালোচিত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শূন্য কোভিড নীতিও তরুণ প্রজন্মের সন্তান ধারণে অনাগ্রহের জন্য দায়ী। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন স্বীকার করেছে যে, নাগরিকদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের ফলে তা সন্তান গ্রহণের ইচ্ছার উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

সংবাদ মাধ্যমের পরিচিত মুখ, ক্লেয়ার জিয়াং বলেন, সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য মানুষ সন্তান গ্রহণের প্রতি অনীহা প্রকাশ করছে। এমন একটি দেশে নিজের সন্তানকে আনার কোনও মানেই নেই।

জনসংখ্যা হ্রাসের সাথে সাথে বয়স্ক জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটছে চীনে। ২০৩৫ সাল নাগাদ চীন ৪০০০ লাখ বৃদ্ধ লোকের বাসস্থান হতে চলেছে, যা জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সাংহাইয়ে বয়স্ক লোকের সংখ্যা ১৮.৭ শতাংশ। অন্যদিকে বেইজিংয়ে এ সংখ্যা ২০.১৮ শতাংশ এবং হংকংয়ে ২০.৫ শতাংশ।

এ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পেনশন ব্যবস্থার উপর প্রবল চাপের সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে ধারণা করা হচ্ছে, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চীনের জন্মহারের মাত্রা হ্রাস পেতে থাকবে।

এমএইচডি/আইকেজে 

আরো পড়ুন:

অরুণাচলের ১১ স্থানের নতুন নাম দিল চীন, কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *