অভিমতমাতৃভূমি

জন্মভূমিকে কেন ভালোবাসি -পূর্ণতা চক্রবর্তী

সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় সুপ্রিয় পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি “জন্মভূমিকে কেন ভালোবাসি” শিরোনামে সৃজনশীল লেখা আহ্বান করেছেন ধূমকেতু বাংলা (dailydhumketu.com)-এর সম্পাদক ও প্রকাশক খোকন কুমার রায়। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই লেখা পাঠিয়েছেন। তাদের লেখাগুলো পর্যায়ক্রমে ছাপা হচ্ছে।

জন্মভূমিকে কেন ভালোবাসি

পূর্ণতা চক্রবর্তী

জন্মভূমি তথা জন্মস্থান হচ্ছে একটি স্থান যেখানে একজন মানুষ জন্মের পর বেড়ে উঠে। সেই স্থানের ভাষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য নিজের মধ্যে ধারণ করে এবং জন্মভূমির প্রতি তার নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব পালন করে। আর এভাবেই তিনি একজন সঠিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।

তাই জন্মভূমিকে তুলনা করা হয় মায়ের সাথে। কথায় আছে, “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী”। অর্থাৎ, জননী (মা) ও জন্মভূমি (মাতৃভূমি) স্বর্গের চেয়েও শ্রেয়। পৃথিবীতে যতই সুন্দর জায়গা থাকুক, নিজের জন্মভূমির চাইতে সুন্দর কোনো জায়গা হয়না।

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, লাখো মানুষের জীবন ও ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টি হয়েছে এক দেশ, নাম তার ‘বাংলাদেশ’। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এখানে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বসবাস। প্রায় সকলেই বাংলায় কথা বলে। বাঙালি ছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলে বেশ কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করে। ২,৪৭,৬৭৭ বর্গকিলোমিটারের (সমুদ্র সীমাসহ) এই দেশটিকে প্রকৃতির আদুরে কন্যাও বলা যায়, কারণ এর অপরূপ রূপ দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতি একে নিজ হাতে সাজিয়েছে। অপূর্ব এর রূপবৈচিত্র্য।
নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, পাখি, ফুল, ফল, পাহাড়, সমুদ্র যেন এদেশের প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই দেশের রূপে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের মানুষ মুগ্ধ হয়েছে।

পূর্ণতা চক্রবর্তী

বাংলাদেশ ছয়টি ঋতুর দেশ, তাই একে ষড়ঋতুর দেশ বলা হয়। ঋতুভেদে প্রকৃতি নিত্যনতুন সাজে হাজির করে নিজেকে। এছাড়া, এদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। এদেশের উপর দিয়ে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদ-নদী বয়ে চলেছে তার আপন গতিতে। সব নদীই উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গপসাগরে গিয়ে পড়েছে। নদীনির্ভর দেশ, তাই এদেশের মাটি বেশ উর্বর। ফলে কৃষি এখানকার প্রধান পেশা। এদেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এখানকার প্রধান উৎপন্ন পণ্য হলো- ধান, পাট, চা, ইক্ষু, সরিষা, গম ও ডাল। আবার এখানকার অনেকেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পদ্মার রূপালী ইলিশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

বাংলাদেশের ভূমিতে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। গ্যাস, জ্বালানি তেল, চুনাপাথর, কয়লা, আকরিক লৌহ এদেশের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ, যা বাংলাদেশকে আরও সম্পদশালী করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রধান দুটি পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে- ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ‘সুন্দরবন’ এবং অন্যটি হচ্ছে, কক্সবাজার। বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট যেহেতু পৃথিবীর সবচাইতে বড়, তাই এটির প্রতি পর্যটকদের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’। ডোরাকাটা এই হিংস্র অথচ সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখতে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ সুন্দরবন ঘুরতে যায়, যদিও তার দেখা পাওয়া অতো সহজ নয়।

কক্সবাজার পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ সাগরতীরে ভীড় করে এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এই দেশ আমাকে ভালোবেসে ঠাঁই দিয়েছে, পরিচয় দিয়েছে। এখানকার মাটি, জল, বাতাস আমার অন্তরে মিশে আছে। যার অপরূপ রূপ আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে, তাঁকে ভালো না বেসে কোনো উপায় নেই। এ দেশ আমাকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমার দেশকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ হোম ইকোনমিকস কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *