নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে ছাড়িয়ে গেছে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রাও।
গত জুলাই-ডিসেম্বর মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০,৪৮৭ কোটি টাকা, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫,৪৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে।
করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে আয় কমে গেলেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি গেল অর্থবছরের তুলনায় এতো বেশি বাড়ার কারণ সম্পর্কে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যাদের আয় কমে গেছে তারা হয়তো সঞ্চয়পত্র কিনছে না। এর বাইরেও বহু মানুষের সঞ্চয়পত্র কেনার মত আয় আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক আমানতের সুদহারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার তিন গুণ বেশি। নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের হিসেবে এখন সঞ্চয়কারীরা এটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
গেল বছরের ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রণালয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র—এ তিনটি মিলে সমন্বিত বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা হবে একক নামে ৫০ লাখ টাকা অথবা যৌথ নামে এক কোটি টাকা।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ সীমা বেঁধে দেয়া হবে এমন খবরে আগেভাগেই অনেকে সঞ্চয়পত্র কিনে ফেলেছেন। এর প্রভাবেই জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি এত বেশি বেড়েছে বলে তার অভিমত।
তবে আসছে দিনগুলোতে এই সীমা বেধে দেয়ার ফলেই হয়তো সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে বলে তার ধারণা।
বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্য থাকলেও প্রথম ছয় মাসেই তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
অর্থ বছর শেষে এই বিক্রির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করছেন আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, যেহেতু বিনিয়োগের বিকল্প ভালো কোনো মাধ্যম নেই তাই সীমা বেঁধে দিলেও নানা কৌশলে সঞ্চয়পত্রেই বিনিয়োগের চেষ্টা করবেন সঞ্চয়কারীরা। যারা পারবেন না তারা যাবেন জমি ও ঘরবাড়ি কেনায়। এর প্রভাবে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বাবল তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে তার অভিমত।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি সরকারের সুদজনিত ব্যয় বাড়িয়ে দিবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এই ব্যয় মেটাতে সরকারকে উন্নয়ন বাজেট কাটছাট করতে হবে। যার প্রভাব পড়তে পারে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে তা নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে। আবার উন্নয়ন ব্যয় কমালে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতিও কমে যেতে পারে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।