প্রচ্ছদ

ছাড়ব না অধিকার || আফগান নারীর স্লোগানে মুখর রাজপথ

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: তালিবানের আশ্বাস আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক যে অনেকটা! সেটা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই বুধবার কাবুলের চারজন মহিলা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদের পথ দেখিয়েছিলেন। সেটাই শুরু। তার পর থেকে প্রতিদিন চার দেওয়ালের ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শয়ে শয়ে আফগান মহিলা। তালিব যোদ্ধাদের রাইফেলের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলছেন তাঁরা, ‘আমাদের অধিকার ছিনিয়ে নিও না! গত দু’দশক ধরে বহু লড়াই করে এই অধিকার পেয়েছি, আর পিছু হঠা সম্ভব নয়।’

ক্ষমতা দখলের পর তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ঘোষণা করেছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কাজের ক্ষেত্রে শরিয়ত মেনে সমস্ত অধিকার পাবেন মহিলারা। কিন্তু ‘শরিয়ত বিধি’র নামে কীভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল, ২০ বছর আগের সে দুঃস্বপ্ন ভোলেননি আফগানিস্তানের মানুষ। বন্ধ হয়েছিল মেয়েদের পড়াশোনা, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া মেয়েদের বাইরে বেরোনোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি বেশ কিছু জায়গা থেকে এমন বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর ইতিমধ্যেই আসছে। সেই সিঁদুরে মেঘ দেখেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে আফগান মহিলাদের। আর তাই তালিবানের নিষেধাজ্ঞা ভুলে, প্রাণের তোয়াক্কা না করে অধিকার বুঝে নিতে রাস্তায় নামছেন তাঁরা।

আফগান টেলিভিশন চ্যানেলের সঞ্চালক শবনম খান দওরান সম্প্রতি এক ভিডিয়ো বার্তায় জানিয়েছেন, তাঁর পুরুষ সহকর্মীরা কাজ চালিয়ে যেতে পারলেও তাঁর অফিস যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে তালিবান। সাংবাদিক খাদিজার দাবি, ‘অফিসের তালিবান নির্বাচিত নয়া ডিরেক্টর আমাকে অফিসে ঢুকতে দেননি। তালিবান ওদের ইচ্ছামতো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। কোনও মহিলা সঞ্চালক বা সাংবাদিক নেই।’

এই সব দেখেশুনে মানবাধিকার কর্মী সুকরিয়া মাশাল বলছেন, ‘রাষ্ট্রগঠনে মহিলাদের অবজ্ঞা করা হলে সে রাষ্ট্রের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। আমরা শিক্ষা, কাজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যোগদানের অধিকার কিছুতেই ছাড়ব না। অনেক লড়াই করে এই অধিকার, এই সম্মান অর্জন করতে হয়েছে।’ তাঁরই এক সহকর্মীর দাবি, ‘কোনও চাপিয়ে দেওয়া সরকার নয়, আমরা চাই আফগান নাগরিকদের ইচ্ছা মেনে সরকার গড়ে উঠুক, আর আমরা সেই আফগান জনতারই অংশ।’

গত জুলাইয়ে কান্দাহারের একটি ব্যাঙ্ক থেকে মহিলা কর্মীদের বের করে দিয়েছিল তালিবান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল, মহিলা কর্মীদের জায়গায় তাঁদের পুরুষ পরিজনকে নিয়োগ করতে। কিন্তু এখন সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে কী করবে তালিবান? লাখ লাখ প্রতিবাদী কণ্ঠ কীভাবে বন্ধ করবে তারা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *