কক্সবাজারের চকরিয়ায় রাস্তা পারাপারের সময় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় একই পরিবারের পাঁচ ভাই নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাটের ফকিরশাহ এলাকায় ভোর পাঁচটায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন একই পরিবারের ৯ জন একসঙ্গে রাস্তা পার হচ্ছিলেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, অনুপম শীল (৪৮), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) ও স্মরণ শীলের (৪৬)।
জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতালের সামান্য উত্তরে রিংভং হাসিনাপাড়ায় বনবিভাগের খাস জায়গায় গড়ে উঠেছে জনবসতি। সেখানে গত ২৮ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সুরেশ চন্দ্র শীল। হিন্দু ধর্মের সব নিয়ম মেনেই তাকে সৎকার করা হয় এবং সৎকার পরবর্তী সব নিয়ম পালন করতে শুরু করেন সুরেশ চন্দ্র শীলের ৬ ছেলে ও দুই মেয়ে। মৃত্যুর ১১ দিন হবে বাবার শ্রাদ্ধ। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে আট ভাইবোন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সারছিলেন। ঠিক তখনই তাদের চাপা দেয় একটি গাড়ি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় চার ভাইয়ের। পরে এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর দুই ভাই ও দুই বোনকে উদ্ধার করে কাছের খ্রিষ্টান হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ১১টার দিকে এক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এই পাঁচ ভাইয়ের মরদেহ আনা হয়েছে বাড়ির উঠানে। এ সময় সন্তানদের মরদেহ দেখে পাথর হয়ে গেছেন ১১ দিন আগে স্বামী হারানো মানু বালা শীল (৬০)।
এ ঘটনার পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলিমরাও এসেছেন নিহতদের বাড়িতে। সুরেশ চন্দ্র শীলের পাঁচ ছেলের একসঙ্গে এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল সবাই। এসবের মধ্যেই যেন পাথর হয়ে বসে আছেন অসহায় মা মানু বালা। তার চোখে পানি নেই। কোনো কথা বলছেন না কারো সঙ্গে, নড়াচড়াও করছেন না। পাঁচ সন্তানকে হারিয়ে এতটাই শোকাহত যে চোখের জলও আসছে না।
মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেফায়েত হোসেন ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গণি জানান, পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ সৎকারের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের চাপা দেওয়া গাড়ি ও ড্রাইভার-হেলপারকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।