নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। এর ফলে প্রায় পাঁচ মাস চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ ছিল না। এতে চিড়িয়াখানার প্রাণিকূলের প্রজনন ক্ষমতাও বেড়ে যায়। ফলে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত প্রাণি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রথমে হরিণ ও নীল ময়ূর বিক্রি করবে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঁচ মাস দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকায় প্রাণিকূলকে কেউ বিরক্ত করছে না। তারা নিজেদের মতো করে খাবার খেয়ে আরাম-আয়েশে সঙ্গীদের নিয়ে দিন পার করছে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সব প্রাণির প্রজনন বেড়েছে। কয়েক মাস আগে মা হরিণগুলো অনেক বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। সবমিলিয়ে চিড়িয়াখানার তিনটি শেডে বর্তমানে ৩১৮টি হরিণ রয়েছে। চিড়িয়াখানার এসব শেডে সর্বসাকুল্যে ৩০০ হরিণের অবাধ বিচরণের সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কিছু হরিণ দ্রুত বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিক্রির জন্য নির্ধারিত হরিণ শাবকগুলোর সরকারি মূল্য প্রতিটি ৭০ হাজার টাকা। তবে এই মূল্য আরও কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। যেহেতু হরিণের নিয়মিত প্রজনন হচ্ছে, তাই এখন প্রতিমাসে অন্তত ২০টি হরিণ শাবক বিক্রি করতে পারবে তারা।
অন্যদিকে, চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৭৮টি নীল ময়ূর রয়েছে। এসব ময়ূর বিক্রি করা হবে। নীল ময়ূরের জন্য পর্যাপ্ত স্থান থাকলেও বিরল প্রজাতির পাখি হওয়ায় এগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এই পাখির বিচরণ বাড়বে। মানুষ নীল ময়ূর সম্পর্কে জানতে পারবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব খাতে আয়ও বাড়বে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এক জোড়া নীল ময়ূর ৫০ হাজার টাকা অর্থাৎ প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০১৬ সালে ২১টি চিত্রা হরিণ বিক্রি করেছিল তারা। ২০১৭ সালে দুইটি, ২০১৮ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে চারটি, ২০২০ সালে আটটি হরিণ বিক্রি হয়। আর গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত তারা ৪৭টি হরিণ বিক্রি করেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ময়ূর বিক্রি শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে। ওই বছর ছয়টি, ২০১৮ সালে ২০টি, ২০১৯ সালে ২৪টি ও ২০২০ সালে আটটিসহ মোট ৫৪টি ময়ূর বিক্রি করেছে তারা। প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা করে এই বাবদ আয় করেছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে এ বছর তারা এখনো কোনো ময়ূর বিক্রি করেনি।
চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা মূলত দেশ-বিদেশের প্রাণি প্রর্দশনের স্থান, এটি খামার নয়। ফলে অতিরিক্ত পশু-পাখি বিক্রি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় সব প্রাণির প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে। পশু-পাখি নিয়মিত বাচ্চা দিচ্ছে। এ কারণে প্রথম ধাপে হরিণ ও নীল ময়ূর বিক্রি করা হবে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৪০-৫০ হাজার টাকায় হরিণ বিক্রি করছে। এ কারণে সরকারি মূল্য ৭০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার বা তার কম মূল্যে বিক্রি করার অনুমোদন পেতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বলেন, চিড়িয়াখানার প্রাণী ও পাখিগুলো এবার প্রচুর বাচ্চা দিয়েছে। শুধু হরিণ আর ময়ূরই নয়, ইমু, উটপাখি, জলহস্তী, জেব্রা, অজগরসহ অনেক প্রাণীই চিড়িয়াখানার ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু, অন্যকোনো প্রাণী বিক্রির অনুমোদন না থাকায় আমরা দেশের ভেতর বা বাইরে অন্যকোনো চিড়িয়াখানার সঙ্গে সেগুলো বিনিময় করার চেষ্টা করছি।