নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বিএমডিসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তারা বলেন, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মানব জাতির প্রধান অস্ত্র অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু যেসব ওষুধ রোগ প্রতিরোধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, সেগুলোর অনেক অ্যান্টিবায়োটিক আজ জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত, অপর্যাপ্ত ও অযৌক্তিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু উদ্ভব হচ্ছে। এই জীবাণু ব্যক্তির জন্য প্রাণঘাতী হওয়া ছাড়াও সমাজে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করতে পারে। সারা বিশ্ব জুড়ে এটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং জীবাণুসমূহ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বিস্তারও দ্রুত ঘটছে। কম বা বেশি সকল প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণ চিকিৎসায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, যথেচ্ছ ব্যবহারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। রোগীদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা বেড়েছে। জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথাগত অ্যান্টিবায়োটিক কাজে আসছে না। এটি মানুষ ও পশুস্বাস্থ্য এবং কৃষি সেক্টরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরোধী জীবাণু পরবর্তীতে পশু থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হতে পারে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চিকিৎসকদের পক্ষেও ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অবাধে ওষুধ বিক্রি করে থাকে ফার্মেসীর লোকজন। অনেক সময় রোগী ও তাদের লোকজনও চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ ও তা অনুযায়ী ওষুধ কেনার প্রয়োজন অনুভব করেন না। ওষুধ প্রতিরোধী বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুস্তাক হোসেন ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, যেসব ওষুধ রোগ প্রতিরোধে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে, সেগুলোর অনেক অ্যান্টিবায়োটিক আজ জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ প্রতিরোধী মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে অনেক সাধারণ সংক্রামক রোগ ভালো হবে না। এতে অসহায় অবস্থায় রোগীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে। ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠার বিষয়টি খুব পরিষ্কার। এ বিষয়ে আজ উদ্যোগ না নিলে আগামীকাল একটি রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে না। লাখ লাখ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারে এমন অতি প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ নষ্ট করে ফেলতে পারি না আমরা। ওই সব ওষুধ যাতে প্রতিরোধী না হয়ে ওঠে সেদিকে সর্তকতা অবলম্বন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে খুব সচেতন হতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পূর্বে বিএমডিসি রেজিস্টার্ড চিকিৎকের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ডা. মুস্তাক হোসেন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সিষ্টিটিউটের পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, এর মধ্যেই বাংলাদেশে যক্ষা, নিউমোনিয়া এবং গণোরিয়ার মতো যৌনরোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এন্টিবায়োটিক-রোধী ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়া বাইরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রি নিয়ন্ত্রিত নয়। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞতা একটি কারণ। অনেকেই রোগ ভালো হয়ে গেলেই অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া বন্ধ করে দেন, কোর্স শেষ করেন না। ফলে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে প্রতিরোধ-ক্ষমতা তৈরি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচার ব্যবহার এখন এমন স্তরে গেছে যে এই প্রথমবারের মতো তারা এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির জন্য একটি বৈশ্বিক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে এটা মনে করিয়ে দেয়া যে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে, তাই এটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার। তা না হলে ওষুধ হিসেবে এটা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে।