জীবন ও পরিবার

চা চাষে বদলে যাচ্ছে দিনাজপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: কৃষি নির্ভর দিনাজপুর জেলায় জ্বলোচ্ছাস, ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন নেই। মাটিও উর্বর। ধান-লিচুসহ ফসল উৎপাদনও বেশি। দেশের খাদ্য ঘাটতিতে যথেষ্ট অবদান রাখছে এ জেলা। এরপরেও ধান-লিচু-ভুট্টার পাশাপাশি দিনাজপুরের সমতল ভূমিতে চা চাষের সাফল্যে দিন দিন বেড়েই চলেছে। পতিত জমি ছাড়াও অনেকে ধানের জমিতেও এই চা চাষ শুরু করেছে। এ অঞ্চলের চা চাষও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে শুরু করেছে।

তবে করোনার সময় বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা পেলেও দিনাজপুরের চা চাষিরা পায়নি। এ অঞ্চলের চা চাষিরা স্বল্প সুদে ঋন, প্রণোদনাসহ আরও টেকনিক্যাল সাপোর্ট সুবিধা পেলে চা চাষ আরও বেড়ে যাবে এমনটাই আশা তাদের। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাওয়ের চা শ্রমিকরা অনুদান পেলেও দিনাজপুরের চা শ্রমিকরা তা পায়নি বলে জানান চাষিরা।

হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় চা ভাল উৎপাদন হয়। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীর সাফল্যের পর দিনাজপুরেও চা চাষের পরিধি বেড়েই চলেছে। পাহাড়ী ঢালু বা উচু ভূমি চা চাষের জন্য উপযুক্ত হলেও সমতল মাটি দিনাজপুরেও চা চাষের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আগামীতে এ চা চাষ বদলে দিতে পারে দিনাজপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এ কারণে একসময় দিনাজপুরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাতে পারে। চা চাষ তৈরি করেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

বীরগঞ্জের মনিরুল ইসলাম, নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন চা চাষি জানান, এ এলাকায় ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু হয়। চা বাগানে নিবিরভাবে পরিচর্যা করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বাগানে যেন পানি না জমে, সেজন্য গাছের গোড়া উচু করে দিতে হয়। চা গাছের ছায়া দিতে মাঝে মধ্যে লাগানো যেতে পারে পেয়ারা, নিম, আম ইত্যাদি গাছ। এ ছাড়াও খরার সময় পানি দিয়ে গাছ সতেজ রাখতে হয়। তবে লাল মাকড়সা ও মশা চা পাতা যেন না খেয়ে ফেলে তার জন্য ওষুধ ছিটানো প্রয়োজন। প্রায় প্রতি মাসেই চা পাতা বিক্রি করা যায়। গাছ যত বড় হবে, পাতার পরিমান ততই বাড়বে। বছরে ২ বার সার ব্যবহার করলেই চলে। এসব চা বাগান থেকে একশ বছর পর্যন্ত চা পাতা তোলা যাবে। এসব বাগানের চা পাতা বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। চা পাতা পঞ্চগড় মৈত্রী, পঞ্চগড় নর্থ বেঙ্গলসহ বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করা হয়। 

অভাবনীয় সাফল্য পেয়ে বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ীর বাঙালীপাড়ার মনিরুল ইসলাম ও তার পিতা আইয়ুব আলী জানান, সবজি চাষের জমিতে ২০১৯ সালে এক একর জমিতে চা চাষ শুরু করেন। প্রথমে ৬ হাজার চারা রোপন করেন। প্রথম অবস্থায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়। শুধু বাগানে যত্ন ও তদারকি করতে হয়। বাগান থেকে জানুয়ারিতে প্রথমবার ৮৫ কেজি চা পাতা তুললেও এখন তা অনেকে বেড়েছে। এরই মধ্যে ৫ বার তোলা হয়েছে। গত ৩০ আগস্ট ২৬০০ কেজি চা পাতা একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছে। ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। তারা বলেন, চা পাতার দাম আরেকটু বাড়লে এবং সরকারী সুযোগ সুবিধা পেলে চা চাষও দিনাজপুরে এনে দিবে নতুন দিগন্ত।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের দিনাজপুর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সাইদুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর অঞ্চলের চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকায় সরকার দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, পঞ্চগড়, নীলফামারী অঞ্চলে চা চাষের সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ভর্তুকি দিয়ে উন্নত বিটি-২ জাতের মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি চারা চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও টেকনিক্যাল সাপোর্টও দেয়া হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন এই প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। দিনাজপুর অঞ্চলের বীরগঞ্জ, কাহারোল ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ৬২ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। তবে এর বাইরেও চাষ হচ্ছে এবং এর আওতায় আনা হবে। এ পর্যন্ত ২০ জন চাষি রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

আরো পড়ুন:

বরগুনায় ৩৪টি পরিবার এখনো বেতের সামগ্রী তৈরি করছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *