প্রচ্ছদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শুষ্ক মাটিতে এবার তুলা চাষে ঝোঁক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু জমিতে সেচসংকটে ধান ও সবজি চাষের প্রবণতা কমে গেছে। সেখানে এখন তুলা চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে কৃষকদের মধ্যে। কম সেচ ও বৃষ্টির পানিতে কাজ হওয়ায় তুলা চাষে ঝুঁকছেন অনেকে। লাভজনক বলেও জানিয়েছেন তারা।

ফলন ভালো হলে বিঘায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা যায়। আষাঢ় মাসের বৃষ্টির পানিতে বীজ বপন করে অগ্রহায়ণ মাসে তুলা ঘরে তোলা যায়। পাঁচ থেকে ছয় বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর ও নওগাঁর পোরশায় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ২১০ জন চাষি প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার পূর্ব লক্ষ্মণপুর গ্রামের সাঁওতাল যুবক জুসেন টুডু তার এক মামা রুবেল বাসকি ও নানি মণি মুরমুকে নিয়ে চার বছর থেকে আট বিঘা জমিতে তুলার চাষ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম বছর খুব একটা লাভ না হলেও দুই বছর ধরে এক লাখ টাকার বেশি লাভ হয়েছে।

কৃষি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়নরত জুসেন টুডু বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান চাষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে উঁচু বরেন্দ্রভূমিতে। সেখানে তুলা চাষ করে সহজেই ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা যাচ্ছে। গত বছর তুলার দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ। এ বছর তুলার দাম প্রতি মণ ৩ হাজার ৪০০ টাকা। জুলাই মাসে বৃষ্টির পানিতে তুলার বীজ বপন করেছেন। এরপর আর সেচ দিতে হয়নি। ডিসেম্বরে ফলনের আশা করছেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নাচোল ইউনিটের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বর্মণ জানিয়েছেন, উপজেলার ৪৮ জন চাষি তুলা চাষের সঙ্গে জড়িত।

বিদ্যুৎ প্রকৌশলে স্নাতক মোতাহার হোসেন (৩৭) একটি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে নিজ গ্রাম উপজেলার বড়দাদপুরে ফিরেছেন। শহুরে জীবন ছেড়ে প্রকৃতির মধ্যে থাকতে চেয়েছেন। বাড়ি ফিরে কাজের অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন নার্সারি ও আমের বাগান। বর্তমানে তিনি ১৭ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন। একই জমিতে চাষ করছেন তুলার।  অন্যদের দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি তুলার চাষে ঝুঁকেছেন।

আলাপকালে মোতাহার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর দিনে দিনে নিচে নামছে। সেচের পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। সেখানে একবার অথবা কোনো সেচ না দিয়েই তুলা চাষ হচ্ছে। এ কারণে তিনি এতে আকৃষ্ট হয়েছেন। বড়দাদপুর গ্রামে মোতাহারের মতো তুলা চাষে ঝুঁকেছেন মওদুদ আহমেদও।

তুলার চাষ নিয়ে কথা হয় তুলা উন্নয়ন বোর্ডের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদন করতে পানি লাগে তিন থেকে চার হাজার লিটার। সেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিমিটার পানিতেই তুলা চাষ সম্ভব। বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু জমিতে তুলা চাষ তাই পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী।

আরো পড়ুন:

চলনবিলে আছে সাড়ে ৪শ’ হাঁসের খামার || কমেছে বেকারত্ব

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *