শিক্ষা ও সাহিত্য

চাঁদপুরে নান্দনিক আধুনিক গণগ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: চাঁদপুরে নিজস্ব ভূমির উপর নান্দনিক আধুনিক ডিজাইনের গণগ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এই গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম ভাড়া বাড়িতে চলে আসছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নিজস্ব ভূমির উপর নান্দনিক ডিজাইনের নির্মিত ভবনে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম নতুনমাত্রা যুক্ত করে। প্রতি শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে।

গ্রন্থাগারে বিভিন্ন প্রকারের ২৪ হাজার ৩৬৩টি বই রয়েছে। বইগুলোর মধ্যে- সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, বিজ্ঞান, আইটি, বিভিন্ন ধরনের সরকারি গেজেট ও ম্যাগাজিন রয়েছে। এছাড়াও রেফারেন্স ও সাম্প্রতিক তথ্যসেবা, উপদেশমূলক ও বিভিন্ন পুরাতন পত্রিকাও রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জাতীয় বাংলা, ইংরেজী ও আঞ্চলিক পত্রিকা, মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও ক্রীড়াজগতের লেখা ম্যাগাজিন রাখা আছে। মিলনায়তনটিতে একযোগে ১শ’ জন বসে লেখাপড়া করতে পারলেও, যেকোন সেমিনার করতে ১৫০ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর এর উদ্বোধন করেন। শহরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বে বিটি সড়কের পশ্চিম পাশে গণপূর্ত বিভাগ ২২ শতাংশ ভূমির ওপর ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬তলা ফাউন্ডেশনে তিন তলা ভবন নির্মাণ করেছে। প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬ তলায় রূপান্তরিত হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থগার অধিদপ্তরের ‘ছয় জেলা পাবলিক লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ প্রকল্প’র অধীন চাঁদপুর জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবনটি অত্যাধুনিক জেলা গণগ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। গণগ্রন্থাগার ভবনটিতে আধুনিক সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে- সাধারণ গ্রন্থাগার, অনার্স-মাস্টারর্স শিক্ষার্থীদের জন্যে ই-গ্রন্থগার, ই-গ্রন্থাগারের জন্যে পর্যাপ্ত ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র, শিশুদের পড়ার সু-ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩শ’আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম ও মঞ্চ, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ও অতিক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রি-ইন্টারনেট ব্যবস্থা ,নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক গ্রন্থ, জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র, বিভিন্ন প্রকার সাময়িকী ও জার্ণাল ইত্যাদি।

নতুন প্রজন্মকে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা ও গ্রন্থাগারের আকর্ষণের জন্য আরো সম্প্রসারণমূলক কাজের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। করোনা চলাকালে নিয়মিত পাঠক আসতে বিঘ্ন হচ্ছে। স্বাভাবিক থাকাকালে ৫০/৬০ জন নিয়মিত পাঠক পড়তে আসতো। বই ধার নেয়া সদস্য সংখ্যা ৫০/৫৫ জনের মত। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী কার্যক্রমটিও জেলা গণগ্রন্থাগারের আওতাভূক্ত। গ্রন্থাগারে অত্যাধুনিক ইন্টারনেট সুবিধাও বিদ্যমান রয়েছে।

সহকারি লাইব্রেরিয়ান উম্মে রায়হান ফেরদৌস বলেন, ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়। গণপূর্ত বিভাগ ১৩ সেপ্টেম্বর ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের নিকট হস্তান্তর করেন। করোনা পরিস্থিতির কয়েক মাস পর আবার এই গ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হলো। এখানে জনবল কাঠামো ৯ জন হলেও কার্যক্রম পরিচালনা করছি ৪ জন। তারমধ্যে গ্রন্থাগারের কার্যক্রমে সহকারি লাইব্রেরীয়ান ১ জন, জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান ১ জন, অফিস সহায়ক কাম নিরাপত্তা প্রহরী ১ জন ও অনিয়মিত শ্রমিক ১ জন চালিয়ে যাচ্ছি। শূন্য পদগুলো হলো- কম্পিউটার অপারেটর ১ জন, টেকনিক্যাল এসিসটেন্ট ক্যাটালগার ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ১ জন, লাইব্রেরী এসিসটেন্ট ১ জন, বুক সটার ১ জন। পূর্বে ভাড়া বাড়িতে জনবল কম থাকলেও কার্যক্রম পরিচালনায় তেমন সমস্যা হয়নি। বর্তমানে শূন্য পদে জনবল নিয়োগে অধিদপ্তর কাজ করছে। খুব সহসাই এই শূন্য পদগুলো পূরণ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

‘খ’ শ্রেণিভুক্ত এই গ্রন্থাগারটি স্কুল-কলেজ থেকে একটু দূরে হলেও নিরিবিলি স্থানে হওয়ায় পাঠকদের পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে সুবিধা হয়ে থাকে। সারাদেশের ৭১টি লাইব্রেরি একযোগে জাতীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকে। যে অডিটরিয়াম আছে তা সরকারি-বেসরকারি যেকোন সভা-সেমিনার বা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *