নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ১৫ দফা দাবিতে সারা দেশে ‘বাংলাদেশ কার্ভাড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্যপরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশন’ এর ডাকা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্যপরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মুকবুল আহমদ। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময়ের বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তারা এ কথা জানান।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর গতকাল বুধবার বিকাল থেকে বন্দরে প্রায় ৩৪ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের অবসান হয়। পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভারের আনাগোনায় সচল হয়েছে দেশের প্রধানতম সমুদ্রবন্দর।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তারা (মালিক ও শ্রমিকরা) ১৫টি দাবিদাওয়া আমাদের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। তারা একটা কর্মসূচিও (৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি) ডিক্লেয়ার করেছিলেন। সভায় আমরা তাদের দাবিদাওয়া শুনেছি। যে দাবিগুলো তাৎক্ষণিক বা এখনই করা উচিত বলে আমরা মনে করেছি, সেগুলোর ক্ষেত্রে বলেছি—আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেগুলো মনে করেছি সময় লাগবে, আমাদের সচিব মহোদয়রা নোট নিয়েছেন এবং তাদের মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলোর ব্যবস্থা নেবেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যেটি ছিল সেটার বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান একটি টাস্কফোর্স গঠন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি সমাধান করবেন বলে জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, অন্য যে দাবিগুলো ছিল সেগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলাপ হওয়ার পর তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বৈঠকে কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, প্রাইম মুভার পণ্যপরিবহনকারী মালিক-শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের ১৮ জন নেতা অংশ নেন। এছাড়া ছিলেন পুলিশের আইজিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভারের আনাগোনায় সচল হয়েছে দেশের প্রধানতম সমুদ্রবন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সফল আলোচনার পর পরিবহন নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এতে বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল, জেটি ও শেডের কার্যক্রম আবার স্বাভাবিক হয়। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে আমদানিকারক, পোশাক রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, বার্থ অপারেটরসহ বন্দর ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
মোটরযান মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বর্ধিত আয়কর অবিলম্বে প্রত্যাহার করা, যেসব চালক ভারী মোটরযান চালাচ্ছেন তাদের সবাইকে সহজ শর্তে এবং সরকারি ফি’র বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়া, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পুনরায় হয়রানিমূলক ফিটনেস ও পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল, সব শ্রেণির মোটরযানে নিয়োজিত শ্রমিকদের রেশন সুবিধার আওতায় আনা, সব বন্দরে অবস্থিত ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মনোনীত প্রতিনিধি এবং সব ড্রাইভার ও সহকারীকে বন্দরে হয়রানিমুক্ত প্রবেশের সুবিধার্থে বার্ষিক নবায়নযোগ্য বায়োমেট্রিক স্মার্টকার্ড দেওয়া, গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা, যেখানে সেখানে গাড়ি চেকিং না করা এবং পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যসহ ১৫ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন নেতারা। ধর্মঘটের কারণে সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম বন্দরেও কোনো পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভার প্রবেশ করতে বা বের হতে পারেনি। এতে বন্দরের ভেতরে ও বাইরের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে (অফডক) কনটেইনার পরিবহন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
আরো পড়ুন: