কৃষি-মৎস্য

ঘরের ভেতর সতেজ সবজির চাষ

শাইখ সিরাজ :

২০০৬ সালের কথা। জাপানের কৃষি কার্যক্রম ঘুরে দেখে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান সরকার দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করে। এর আগে জাপানের মোট কৃষিজমির প্রায় ৮০ শতাংশই ছিল জমিদারদের হাতে। জাপান সরকার মোট কৃষিজমির দুই-তৃতীয়াংশ কিনে তা কম দামে ক্ষুদ্র কৃষকের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে ক্ষুদ্র কৃষক বেশ উপকৃত হয়। সংস্কারের আগে জাপানে মোট কৃষিজমির মাত্র ২৩ শতাংশের মালিকানা ছিল কৃষকের এবং সংস্কারের পর দেশটির মোট জমির পুরোটার মালিক হয় কৃষক।

চিরতরে জমিদারি প্রথা বন্ধে কৃষিজমির মালিকানার ওপর সীমা আরোপ করে জাপান সরকার। এ কারণে দীর্ঘ ৫০ বছর জাপানের কৃষিতে বেসরকারি করপোরেশনগুলোর বিনিয়োগের কোনো সুযোগ ছিল না। ১৯৬৫ সালে জাপানে কৃষকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ। ৫০ বছরের ব্যবধানে ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২০ লাখের নিচে। দেশটিতে কৃষি খাতে দুশ্চিন্তার আর এক বড় কারণ হলো কৃষকের বয়স। জাপানের কৃষি খাতে বর্তমানে প্রতি ১০ জন কৃষকের মধ্যে ছয়জনেরই বয়স ৬০-এর ওপর। অন্যদিকে তরুণদের মধ্যেও কৃষিকে সার্বক্ষণিক পেশা হিসেবে গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়। ফলে জাপানের কৃষিকে বৃদ্ধ কৃষকদের পক্ষে টেনে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

একদিকে প্রয়োজন হয় ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণের। অন্যদিকে তরুণদের আগ্রহী করতে কৃষিকে করপোরেটরূপে উপস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়। জাপান সরকার কৃষিতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে। যার ফলে কৃষিতে করপোরেট অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক যান্ত্রিকীকরণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনেকটা আশার আলো সঞ্চার করে। বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেশটির কৃষি ও কৃষিপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ শুরু করে। তার পর থেকে আমূল পাল্টে যেতে থাকে জাপানের কৃষি।

বলছিলাম ২০০৬ সালে জাপানের কৃষি ব্যবস্থাপনার কিছুটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে দেখেছিলাম পাসোনা-টু নামের একটি প্রতিষ্ঠান অবসরে যাওয়া বয়স্ক মানুষের জন্য বিকল্প কৃষি অনুশীলনের পদ্ধতি হিসেবে মাটি থেকে ৩০ ফুট নিচে নিয়ন্ত্রিত এলইডি আলো, বাতাস ও তাপমাত্রায় হাইড্রোপনিক কৃষিকাজ ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছিল। সেটি ছিল মাটিবিহীন কৃষি। এরপর এ কৃষির দৌড় বিস্তৃত হয়েছে বহুদূর। ইউরোপ, আমেরিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সবখানেই দেখেছি মাটিবিহীন কৃষির অনুশীলন চলছে। এটি কৃষির সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া এক উদ্ভাবন। ভেবেছি আমাদের দেশে কখন শুরু হবে আধুনিক প্রযুক্তির ও রকম কৃষি।

বিদেশে দেখে আসা প্রযুক্তি দেশেও পরিচিত করে তোলার এক অদম্য ইচ্ছা আমার। যেখানে যে প্রযুক্তি দেখেছি তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি টেলিভিশনে। সেটা ছড়িয়ে গেছে। যেমন ঘরের ভিতর মাছ চাষেরও বহু প্রযুক্তি এসেছে। মানুষের খাদ্য উৎপাদন থেকে এ তৎপরতা পৌঁছেছে ঘরের ভিতর প্রাণিসম্পদের ঘাস উৎপাদন পর্যন্ত। বিদেশের ছাদকৃষি কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ের দৌড় দেখে বহু আগেই মনে হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে বাসাবাড়ি ভাড়া নেওয়া হবে বসবাসের জন্য নয়, কৃষি উৎপাদনের জন্য। আর সে ভাবনাই সত্য হয়ে ধরা দিল খোদ ঢাকা শহরেই। এ জনবহুল শহরের এক বাড়ি রূপান্তরিত হয়েছে অনন্য এক সবজিবাগানে। ঘরের ভিতরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ হচ্ছে নানান বিদেশি সবজি।

বাড়িটি ঢাকার মিরপুরে। একসময়ের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি ভাড়া নিয়ে চার তরুণ উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছেন ভার্টিক্যাল ফার্ম। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফার্ম ইমাজিনেশন’। সত্যি সত্যিই এ শহরের জন্য এটি যেন এক কল্পনাচিত্রই বলা চলে। ঘরের ভিতর হাইড্রোপনিক সিস্টেমে ভার্টিক্যাল ফার্মে উৎপাদন হচ্ছে লেটুস, বক চয়, বেসিল, সেলারি, ক্যাপসিকাম, চেরি, টমেটোসহ বেশ কয়েক রকমের সালাদ ও সবজি ফসল। এ আয়োজন উন্নত বিশ্বের সর্বাধুনিক কৃষি আয়োজনগুলোর মতোই। এটি দেখে যুক্তরাজ্যের নিউজার্সিতে অবস্থিত বৃহৎ একটি ভার্টিক্যাল ফার্মের কথা মনে পড়ে যায়। যেটি অ্যারোফার্ম নামে পরিচিত। সেখানেও বিশাল বিশাল কক্ষে স্তরে স্তরে সাজানো ট্রেতে উৎপাদিত হচ্ছে নানা রকমের সবুজ সবজি। সাধারণ কৃষির তুলনায় সেখানে ৯৫ ভাগ পানি কম ব্যবহার হচ্ছে। পরিমিত আলো ও তাপের জন্য ব্যবহার হচ্ছে বিশেষায়িত এলইডি আলো।

অ্যারোফার্মের বিশাল পরিধির তুলনায় আমাদের মিরপুরের এ আয়োজন কোনো অংশেই কম নয়। ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকেই কয়েকজন উদ্যোক্তা কৃষির এমন স্বপ্ন দেখেছেন। উদ্যোক্তাদের অন্যতম পারভীন আক্তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা এ উদ্যোক্তা কাজ করেছেন দেশি-বিদেশি নানান গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। এমনকি শৈশব থেকে বেড়েও উঠেছেন শহরে। কিন্তু টেলিভিশনের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানে দেখা আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তির কৃষি অনুশীলন তাকে দারুণভাবে মোহিত করে। তার চিন্তায় আগামীর কৃষিবাণিজ্যের একটা রূপ বাস্তবিক ও প্রায়োগিকভাবেই প্রতীয়মান হয়।

পারভীন বলছিলেন টেলিভিশন ও ইউটিউবে আমার বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখেই তিনি এমন উদ্যোগ নিতে সাহসী হয়ে ওঠেন। পারভীনের কাছে জানতে চাই কৃষি নিয়ে এমন ভাবনা কেন মাথায় এলো? ‘করোনা একটা বিষয় প্রচন্ডভাবে সত্য বলে প্রমাণ করে দিয়েছে তা হলো, নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা মানুষের সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে উন্নত দেশগুলোকেও খাদ্য ঘাটতির ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। আবার যারা কভিডে আক্রান্ত হয়েছেন তারা বুঝতে পেরেছেন নিরাপদ খাদ্য ছাড়া শরীরের শক্ত ইমিউন সিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ফলে এখন থেকে সতেজ নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়বে। এ দুটি ব্যাপার মাথায় রেখে আমার মনে হয়েছে আপনার দেখানো উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার এখন দারুণ সময়।’- বেশ দৃঢ়তা পারভীনের কণ্ঠে।

বাড়ির একটা কক্ষে চলছে প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ কাপে ককোপিট ঢেলে বীজ বপনের কাজ। যেমনটা কারখানায় হয়। একেকজনের একেকটি অংশের কাজ। একজন ট্রেতে সাজিয়ে নিচ্ছেন প্লাস্টিকের কাপ। দুজন কাপগুলোয় ভরে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় ককোপিট। আর কেউ হয়তো বুনে দিচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত বীজ। আবার কেউ সারি সারি করে সাজিয়ে রাখছেন ট্রেগুলো। একটু হাঁটতেই করিডোর। করিডোর ধরে এগোতেই তিনটি ছোট ছোট কক্ষ। একেকটি কক্ষে নিচ থেকে ওপর অবধি সাজানো স্টিলের ট্রে, কিংবা প্লাস্টিকের পাইপ কেটে বানানো বিশেষ ডায়াস। সেখানে চাষ হচ্ছে সবুজ সবজি লেটুস, বকচয়, বেসিল ইত্যাদি। বিজ্ঞান মেনেই ঘনত্বে উৎপাদন করা হচ্ছে এসব সবজি।

এক একটা ট্রেতে এক ধরনের ফসল। বকচয় কেউ বা বলে পকচয় একটি বিদেশি সবজি। বিশেষ করে চীনাদের খুব প্রিয়। স্যুপ কিংবা সালাদে খুব ব্যবহৃত হয়। পারভীন জানালেন ইউরোপিয়ানরা বার্গারেও খায়। বকচয় উৎপাদন হতে সময় লাগে সাড়ে তিন মাস। এক একটির পাইকারি বাজারমূল্য ৫০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা দরে।

পারভীনকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম ৪ হাজার বর্গফুটের ফ্লোরে তিনটি রুমে তাদের পরীক্ষামূলক ঘরোয়া কৃষির কাজকারবার। ৪০টি র‌্যাকে প্রতি মাসে গড়ে ৮০০ সবজি উৎপাদন নিশ্চিত হচ্ছে। হাইড্রোপনিক পদ্ধতি হলেও শতভাগ ‘গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস’ অনুসরণ করছেন তারা। ফলে ফসলের বিশুদ্ধতা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকছে না। উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি উৎসাহব্যঞ্জক। প্রতিটি কক্ষে শতভাগ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আলো, পানি, বাতাস সবকিছুরই পরিমিত ব্যবহার হচ্ছে এ উৎপাদন ব্যবস্থায়।

পারভীন বলছিলেন, নতুন প্রজন্মকে নতুন কৃষির সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়াও একটি লক্ষ্য তাদের। সেখানে পারভীনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে রাদিয়া, রিয়ানাসহ বেশ কয়েকজন তরুণ কাজ করছিলেন গভীর মনোযোগে। তাদের সঙ্গেও কথা হলো। আধুনিক এ প্রযুক্তির কৃষিতে দারুণ আগ্রহ তাদের। শার্ট, প্যান্ট, জুতা পরেই দিব্যি কাজ করা যাচ্ছে সেখানে। এ উদ্যোগ নিয়ে দারুণ আশাবাদী তারাও। স্বপ্ন দেখছেন এমন কৃষি উদ্যোগে ভবিষ্যৎ গড়ার। ছাদে একটি কক্ষে পারভীনের অফিসঘর। তার পাশেই ছাদের ওপরও নেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ। গড়ে তোলা হয়েছে কাচের দেয়ালে ঘেরা ছোট্ট গ্রিনহাউস।

সেখানে চাষ হচ্ছে চেরি টমেটো ও নানা রঙের ক্যাপসিকাম। গ্রিনহাউসটির মধ্যে ফসল উৎপাদনের বিশেষত্ব হলো কোনো কৃত্রিম আলোয় নয়, প্রাকৃতিক আলো ও তাপমাত্রাই এখানে ফসলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেখে মনে হলো ছাদের ওপর প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলের জাত গবেষণার একটি গ্রিনহাউসের কথা। সেটি ছিল বেসরকারি কৃষি-শিল্প প্রতিষ্ঠান এসিআইর মলিক্যুলার ল্যাবের ছাদে। তবে এ ফার্ম ইমাজিনেশনে ফসলের উৎপাদন ব্যয় কমাতে নেওয়া হয়েছে নানা কৌশল। সবকিছু তৈরি করা হয়েছে দেশি উপাদানে।

পারভীনের অফিসে বসে তাজা লেটুস, বকচয়, চেরি টমেটো আর ক্যাপসিকামের সালাদ খেতে খেতে কথা হচ্ছিল। জানতে চাইলাম এ ফার্ম নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? তিনি বললেন, এটি আসলে একটা পরীক্ষামূলক উদ্যোগ। নিজেদের দেশি উপকরণ ব্যবহার করে গত দেড়টি বছর ধরে ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্য দিয়ে তার দল একটা সফল কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি যেমন ঢাকার একটি বাড়িতে বসে এমন সতেজ সবজি উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারছেন। এখানে উৎপাদিত সবজির বাজারে বিপুল চাহিদা। তার একার পক্ষে তা সাপ্লাই দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি এ উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। উৎসাহীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে চান যুবশক্তি। পারভীনের চোখে এক অদম্য আশার আলো।

প্রিয় পাঠক! পৃথিবীর প্রাচীনতম বিজ্ঞান কৃষি। কালের বিবর্তনে মানুষের স্বভাব ও খাদ্য অন্বেষণের একটি বিশেষ ক্রিয়ায় পরিণত হয় বিষয়টি। কিন্তু বিজ্ঞান ছাড়া ফসলের একটি দানা কিংবা খাদ্যের কোনো উপকরণই পাওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার কথা চিন্তা করেই অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদনের পাশাপাশি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত ফসল উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিশ্বের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা। বিজ্ঞানই সবার সামনে মেলে ধরছে উৎপাদনের সহজ সমাধান। বিষয়গুলো সূক্ষ্মভাবে অনুসরণটাই সবচেয়ে বড় কথা। পারভীন আক্তার যেভাবে ইনডোর ফার্মিংয়ের নানা বিষয় ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করলেন তা যথেষ্টই আশাজাগানিয়া। আমার বিশ্বাস, এ চিত্র দেখে অনেকেই উদ্যোগী হতে চাইবেন ভার্টিক্যাল ফার্মিংয়ে। তাদের উদ্দেশে বলি, বিজ্ঞানভিত্তিক এ উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো গভীরভাবে জানা-বোঝা অত্যন্ত জরুরি। শুধু লাভের লক্ষ্য নয়, বরং ভালো কিছু করার লক্ষ্য থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

আরো পড়ুন:

ইন্দোনেশিয়ার ‘রেড রাইস’ চাষ করে চমক দেখালেন ফরিদপুরের গিয়াস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *