গ্রন্থাগারে চাকরির ‘পাঠক’

গ্রন্থাগারের প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান মো. আহছান উল্যাহ বলেন, চাকরির গাইড কিনে না দিলে তো পাঠক একবারে হারিয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে নগরের সোনাডাঙ্গার একটি মেসে থেকে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মো. ইনজামুল হক। প্রতিদিনই এ গ্রন্থাগারে আসেন তিনি। চাকরির পড়ার জায়গা হিসেবে গ্রন্থাগারকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইনজামুল বলেন, ‘এখানে সবাই

মূলত চাকরির প্রস্তুতির পড়াই পড়েন। বেশির ভাগই দুপুরের খাবার সঙ্গে আনেন।’

সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করা শ্যামসুন্দর বিশ্বাস দেড় বছর ধরে নিয়মিত এই গ্রন্থাগারে আসেন। তিনিও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর বাইরে অন্য কোনো বই এ সময়ে তিনি পড়েননি। তিনি বলেন, ‘আগে টিকে থাকাই ব্যাপার। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে এখানে আসা বেশির ভাগ তরুণই চাকরির পড়াশোনাই করেন। অন্য বই পড়ার সময় দিতে পারি না।’

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রন্থাগার ভবনটিতে জরাজীর্ণ দশা। ভবনটির দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে। দেয়ালের ওপরের দিকে শেওলা জমেছে। জানালাগুলোর কাচ ভেঙে ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ভবনের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। গ্রন্থাগারের মধ্যে রাখা বইগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।

দোতলায় দেখা গেছে, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষার জন্য কক্ষের মধ্যেই পলিথিন টানানো হয়েছে। সিঁড়ির দেয়াল ও ছাদে ফাটল ধরেছে।

রয়েছে জনবল–সংকটও। কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ২৮টি পদের মধ্যে ১৩টি পদে কোনো জনবল নেই। নেই কোনো কম্পিউটার সার্ভার। দুটি স্ক্যানারের একটি অচল। ইন্টারনেটের গতি খুবই দুর্বল। পাঠকের জন্য একটি মাত্র ফটোকপি মেশিন, সেটিও অকেজো।

গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে ১৯৮২ সালে এটি বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে উন্নীত হয়। বর্তমানে এখানে ৮৭ হাজার বাংলা এবং প্রায় ৩৮ হাজার ইংরেজি বই মজুত আছে। এর বাইরে প্রায় ১৪ হাজার বই হারিয়ে গেছে এবং ৮ হাজারের বেশি বই খারিজ করা হয়েছে। গ্রন্থাগার খোলা থাকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রতিদিন

গ্রন্থাগারে ১৫০ থেকে ১৮০ জন আসেন। পাঠকদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে একজনের কম গ্রন্থাগার থেকে বই তোলেন। গ্রন্থাগারের নিবন্ধিত সদস্যসংখ্যা মাত্র ২১০।

গ্রন্থাগারে চাকরিপ্রার্থী পাঠকদের আধিক্য এবং তাঁদের জন্য গাইড কেনার বিষয়ে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান ও উপপরিচালক মো. আহছান উল্যাহ বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটেছে। স্থানীয়ভাবে পত্রিকা কেনা বাবদ বরাদ্দ থেকে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরির গাইড কেনা হয়। এসব কিনে না দিলে তো পাঠক একবারে হারিয়ে যাবে।

গ্রন্থাগারে ১৫০ থেকে ১৮০ জন আসেন। পাঠকদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে একজনের কম গ্রন্থাগার থেকে বই তোলেন। গ্রন্থাগারের নিবন্ধিত সদস্যসংখ্যা মাত্র ২১০।

গ্রন্থাগারে চাকরিপ্রার্থী পাঠকদের আধিক্য এবং তাঁদের জন্য গাইড কেনার বিষয়ে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান ও উপপরিচালক মো. আহছান উল্যাহ বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটেছে। স্থানীয়ভাবে পত্রিকা কেনা বাবদ বরাদ্দ থেকে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরির গাইড কেনা হয়। এসব কিনে না দিলে তো পাঠক একবারে হারিয়ে যাবে।

আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের যে স্লোগান—‘সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার, ডিজিটাল গ্রন্থাগার’, সেই ডিজিটাল গ্রন্থাগারের কোনো সুবিধাই এখানে নেই। গ্রন্থাগারে আসা সাধারণ পাঠকদের অভিযোগ, সেখানে বিষয় অনুযায়ী বই সাজানো নেই। এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। নেই কোনো ক্যাটালগ। ফলে নির্দিষ্ট বই খুঁজতে সময় অপচয় হয়।

উপপরিচালক মো. আহছান উল্যাহ বলেন, আশপাশে িশ্ববিদ্যালয় বা বড় কলেজ নেই। দূরত্বের কারণে মূল শহরের পাঠকও এখানে খুব একটা আসেন না। ঘরে বসে অনলাইনে তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ বেড়েছে। সব মিলিয়ে গ্রন্থাগারে পাঠক কিছুটা কম।

অবকাঠামোর দুর্দশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ১০ বছর আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। নকশা অনুয়ায়ী এটা উল্লম্বভাবে বর্ধিত করারও সুযোগ নেই। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব সমস্যার কথা বহুবার জানিয়েছি। পুরোনো গ্রন্থাগার ভবন ভেঙে আধুনিক সুবিধাসংবলিত ৯ তলা নতুন গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণের চিন্তা আছে কর্তৃপক্ষের।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *