প্রচ্ছদ

গুলিতে নিহত কে এই রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ?

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন মুহিবুল্লাহ নামে একজন রোহিঙ্গা নেতা। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন। শীর্ষ পাঁচজন রোহিঙ্গা নেতার একজন হলেন এই মুহিবুল্লাহ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকানোসহ নানা কারণে এই নেতা দেশে-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত।
উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে নিজের অফিসে সহযোগীদের নিয়ে বসা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজন বন্দুকধারী এসে তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি চালায়। তিনটি গুলি তার বুকে লাগে। তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ২০১৯ সালে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে আলোচিত হয়। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ঠেকিয়ে দেওয়ার পেছনে তিনি মূল কলকাঠি নাড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তখন থেকেই তিনি রয়েছেন টেকনাফ অঞ্চলে। ১৫ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ বা এআরএসপিএইচ। স্থানীয় বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গেও গড়েন যোগাযোগ। ধীরে ধীরে মুহিবুল্লাহ প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার একজন হয়ে ওঠেন।
মুহিবুল্লাহর মূল উত্থান হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার পর। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা থেকেই মদদ পায় মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ।
ইংরেজি ভাষা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন বিদেশিদের। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে র‌্যাব একবার মুহিবুল্লাহকে আটক করে উখিয়া থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশে কোনো ধরনের রেকর্ড ছাড়াই তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর গত এক বছরে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ করানো হয়েছে।
এই মুহিবুল্লাহই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আডটপাসের ওপর ভিসা ইস্যু করে নিজ দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন মুহিবুল্লাহ। তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিষয়টি যখন আলোচনায় আসে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, মহিবুল্লাহ এক্সিট পারমিট অর্ডার নিয়ে আমেরিকায় গেছেন। তাকে পাসপোর্ট ছাড়াই ভিসা দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রী।
আরাকান ‘রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামের রোহিঙ্গা সংগঠনের ব্যানারে ২০১৯ সালে কুতুপালং ক্যাম্পে জমায়েত করা হয় লাখো রোহিঙ্গাকে। আর রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ আয়োজনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন মুহিবুল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *