তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

গুগল-ফেসবুকের বিরুদ্ধে কঠোর হতে যাচ্ছে ইইউ

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: টেক জায়ান্ট গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত কর ফাঁকি, অযথা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়া, গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু চুরি করা এবং ভুয়া খবর ছড়িয়ে গণতন্ত্রকে হুমকিতে ফেলার অভিযোগে এবার নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ইইউ বলছে, গুরুতর এসব অভিযোগ তদন্তে নেমেছে তাদের সদস্য দেশগুলো। একইসঙ্গে গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু ও তথ্য বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করে তাদের কোনো অর্থ না দেওয়ার অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিযোগিতার নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটকের পরিষেবা ও বিক্রয়ের ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হতে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

২০১৭ সালে বাজারে একক আধিপত্য ধরে রেখে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার একাই নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগে গুগলকে ২৪০ কোটি ইউরো জরিমানা করেছিল  ইউরোপীয় কমিশন। গুগলের বিরুদ্ধে অভিযোগ,  গুগলের একচেটিয়া কর্তৃত্বের কারণে অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলোকে কোনোভাবেই সুযোগ দিচ্ছে না সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টটি। বুধবার এই জরিমানা বিষয়ে রায় দেবে লুক্সেমবার্গের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালত।

এই রায়ের পর নানা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অ্যাপল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট কিভাবে বিভিন্ন দেশে নিজেদের পরিষেবা বিস্তৃতির পর কর ফাঁকি দিয়ে আসছে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের পণ্য বিক্রয়ের নামে একক আধিপত্য বজায় রাখার অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ পর্যন্ত গুগলকে ৮৩০ কোটি ইউরো জরিমানা করেছে।

২০১৩ সালে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ-সেভেন ব্যবহারকারীদের জন্য সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারকে চাপিয়ে দিয়েছিল।এর দায়ে মাইক্রোসফটকে ৫৬ কোটি ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল।

কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র- সাত সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশের জোট জি-৭ জোট জানায়, টেক জায়ান্টদের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করা হবে।

নানা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টেক জায়ান্টরা বছরের কর পরিশোধের সরাসরি পথ এড়িয়ে স্কিমের মাধ্যমে কিছু কর পরিশোধ করছে। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় কমিশনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আয়ারল্যান্ড অ্যাপলকে অবৈধ কর সুবিধা দিয়েছে। পরে ইইউ অ্যাপলকে ১৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে তা আয়ারল্যান্ড কর কমিশনকে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে অ্যাপল আদালতে যায়, রায়ও আসে তাদের পক্ষে। ইউরোপীয় কমিশন পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

টেক জায়ান্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে হরদম চুরি হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য। ব্যক্তিগত সুরক্ষা নীতিমালার বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা নির্দেশনা দেয়, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার সময় তাদের অবশ্যই সম্মতি চাইতে হবে এবং তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে বিভিন্ন উত্স থেকে সংগৃহীত ডেটা আর ব্যবহার করতে পারে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য সুরক্ষা নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জুলাইয়ে লুক্সেমবার্গ কর্তৃপক্ষ অ্যামাজনকে ৭৪ কোটি ইউরো জরিমানা করেছিল।

৫৩ কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য পাচার হওয়ার পর আয়ারল্যান্ড গত এপ্রিল মাসে ফেসবুকের নিরাপত্তার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।

ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর  বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে নানা ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে উসকে দেয় এমন কোনো কনটেন্ট দেখা গেলে তা এক ঘণ্টার মধ্যেই সরিয়ে নিতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে কিছু প্ল্যাটফর্ম মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নিজেদের বিজ্ঞাপনের আয় বাড়াচ্ছে- এমন অভিযোগে বেশকিছু অ্যালগরিদম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে।

বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমগুলো অভিযোগ করছে, গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট সংবাদপত্রের একাধিক বিষয়বস্তু ব্যবহার করলেও তাদের সেভাবে অর্থ দিচ্ছে না। এই অভিযোগের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৯ সালে ‘প্রতিবেশী আইন’ নামে একটি কপিরাইট আইন প্রণয়ণ করে, যাতে গুগল, ফেসবুক, টুইটার গণমাধ্যমের কোনো তথ্য ব্যবহার করলেই তাদের অর্থ দিতে বাধ্য দিতে থাকবে।

আরো পড়ুন:

যা জানা দরকার গ্রামীণফোন ফ্রি ফেসবুক ও ফ্রি ইন্টারনেট সম্পর্কে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *