নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোর কাজ শেষ হওয়ায় খুশির জোয়ারে ভাসছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।

বৃহস্পতিবার সেতুর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বসানোর দিনটিতে পদ্মাপাড়ের মানুষের উচ্ছ্বাস যেন বাঁধ ভেঙেছে। শুধু পদ্মাপাড় কেন দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে এসেছে আনন্দে যোগ দিতে।

বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের এই সেতু দেখতে আসা মানুষের ভিড় শুক্রবারও কমেনি। ছুটে এসেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্তে।

তবে নিরাপত্তার কারণে সেনাসদস্যরা প্রকল্প এলাকার ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। দর্শনার্থীরা সেতুর সংযোগ সড়ক, রেল প্রকল্প ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সময় কাটিয়ে ফিরে গেছেন। অনেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে সেতু দেখার জন্য এসেছেন। সেখানেও সেনাবাহিনীর বাধার কারণে সেতুর কাছে যেতে পারেননি।

স্থানীয় নাওডোবা এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে শত শত লোক ছুটে এসেছে স্বপ্নের সেতু দেখতে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। তিন বছর পর বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়।

মোটরসাইকেলযোগে বরিশাল থেকে সজিব হোসেন চার বন্ধু নিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা এসেছেন স্বপ্নের সেতু দেখতে। সেনাবাহিনীর বাধার কারণে সেতুর কাছে যেতে পারেননি। তাই দূর থেকে দেখেই চলে যান তারা।

ঢাকা থেকে আসা স্নাতকের ছাত্র কে এম রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “অনেকদিন ধরে শুনছি স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কথা। গতকাল শুনলাম সবকটি স্প্যান বসানো হয়েছে। তাই আর বসে থাকতে পারলাম না। আজ দেখতে চলে আসলাম।”

ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল ৪১তম স্প্যান বসানোর পর আজ শুক্রবার পুরো পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে চলে আসি। কিন্তু সেনাবাহিনীর লোকজন ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই পদ্মাপাড়ের হোটলে খাওয়া দাওয়া করে চলে যাব।”

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম মাদবর বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয়। এরপর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখার জন্য শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মাপাড়ে লোকজন আসছে। তাদের মধ্যে খুশির বন্যা বইছে।

স্থানীয় আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “আমরা বাপ-দাদার জমিজমা ভিটামাটি পদ্মা সেতুতে দেওয়ার পর যখন খবর পাই যে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয়েছে। তখন আমাদের মনে আর দুঃখ নেই। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের পদ্মার পাড়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরাও আনন্দে মেতেছি।”

জাজিরা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আশ্রাফুজ্জামাল ভুইয়া বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম আঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা ও জীবন-জীবিকা বদলে যাবে। পদ্মাপাড়ের মানুষের অনেক আবেগ ও ভালোবাসা জড়িয়ে আছে এই সেতুতে। সেতুটি পুরো দৃশ্যমান হওয়ার মুহূর্তকে ঘিরে মানুষ আনন্দে মেতেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *