মাতৃভূমি

খুনিদের আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবার সবক দেয় : শেখ হাসিনা

ডেস্ক প্রতিবেদন, ধূমকেতু বাংলা: বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে গণতন্ত্র আর মানবাধিকার নিয়ে সমালোচনার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “আমেরিকা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে আর খুনিদেরকে আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়। কেন আমি জানি না। তারা নাকি বিশ্বের সব থেকে গণতান্ত্রিক দেশ!”

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ ও ‘Bangabandhu and the Judiciary’ শীর্ষক মুজিব স্মারকগ্রন্থ এবং ‘ন্যায় কণ্ঠ’ শীর্ষক মুজিববর্ষ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। দণ্ডিত আরেক খুনি এইচ বি এম নূর চৌধুরী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডায়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। পাশাপাশি এবার মানবাধিকার দিবসে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের মারা যাওয়ার ঘটনায় র‌্যাবকে দায়ী করে বাহিনীর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমেরিকার মতো জায়গা, যারা সব সময় ন্যায়বিচারের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, তারা মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু আমাদের যে মানবধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আমরা যে ন্যায় বিচার পাইনি.. তারপর যখন এই বিচার হল, সেই খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে। নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে কানাডা, আর খুনি রাশেদ এখনও আমেরিকায়।”

“তাদের কাছ থেকে আমাদের আইনের শাসনের সবকও শুনতে হয়, গণতন্ত্রের কথাও শুনতে হয়, ন্যায়বিচারের কথাও শুনতে হয়, সেটিই আমার কাছে অবাক লাগে।”

জাতির পিতার খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টা চালানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি সরকারে আসার পর থেকে (যুক্তরাষ্ট্রে) যতজন প্রেসিডেন্ট এসেছেন, প্রত্যেকের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি যে একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা কীভাবে আশ্রয় দেন, আপনাদের জুডিশিয়ারি কীভাবে আশ্রয় দেয়, কীভাবে আপনারা একটা খুনিকে আশ্রয় দেন? তাকে (রাশেদ) আজ পর্যন্ত ফেরত দিল না।”

মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবসময় সক্রিয় রয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ন্যায়বিচার মানুষের প্রাপ্তি। সেটা যেন সব সময় পায় সেটা আমরা চাই। আমরা যারা পনেরই অগাস্টে হারিয়েছিলাম .. আমার মতো বাবা মা হারিয়ে যেন কাউকে বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে না হয়। আমরা ভুক্তভোগী, আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কী?”

“সেটা আপনারা নিশ্চিত করে দেবেন। সেটাই আমরা চাই। আর আমি যতক্ষণ সরকারে আছি, এর জন্য যা যা দরকার আমরা করব,” বিচারকদের উদ্দেশে বলেন সরকার প্রধান।

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট স্বজনদের হারানোর পাশাপাশি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকোণ্ডের পর অধ্যাদেশ জারি করে বিচারে বাধা তৈরির ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যের শেষ ভাগে বলেন, “আমি অনেক অনেক সময় নিলাম। কারণ আসলে বহু বছর বিচার না পেয়ে মনে অনেক দুঃখ ছিল। যা হোক, এই হত্যার বিচার পেয়েছি। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।”

জাতির পিতার হত্যার বিচার হলেও এর নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

“এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।”

জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কথাও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এই উন্নতিটা করতে পেরেছে।”

দেশকে উন্নতির জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক ঝড় ঝাপ্টা মোকাবেলার কথাও বলেন তিনি।

“কখনও সেই হেফাজতকে নিয়ে এসে তাদেরকে নিয়ে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, জ্বালাও-পোড়াও করা, কখনও অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করা, নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তা মোকাবেলা করেই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশকে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও বক্তব্য রাখেন।

সূত্র: বিডিনিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *