লাইফস্টাইল

খাসিয়া সমাজে বিয়ের পর পুরুষরা ওঠেন শ্বশুর বাড়িতে

বাংলাদেশে বসবাসরত ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাপনে যেমন রয়েছে বৈচিত্র্য, তেমনি রয়েছে স্বকীয়তা। তাদের উৎসব, ধর্ম, শিক্ষা, ভাষা প্রভৃতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ধূমকেতু ডটকম-এর বিশেষ প্রতিবেদক নিখিল মানখিন। প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি শনিবার। আজ প্রকাশিত হলো [৪র্থ পর্ব]। চোখ রাখুন ধূমকেতু ডটকম-এ।

নিখিল মানখিন, ধূমকেতু ডটকম: বাংলাদেশে বসবাসরত ৪৫টি ক্ষুদ্র জাতিসত্বার মধ্যে একটি হলো খাসিয়া। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলজুড়ে তাদের বসবাস। তবে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যেও দেখা মেলে তাদের। খাসিয়া সমাজ মূলত মাতৃতান্ত্রিক। সব সম্পদের মালিক হন মেয়েরা। সম্পত্তিতে পুরুষদের আইনগত অধিকার থাকে না। তাদের অর্থনীতি মূলত পান চাষ এবং কৃষি কাজকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তারা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। অনেক সংকটের মাঝেও তারা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী হিসেবে সমাদৃত। তাদের  সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধ। সরকারি পরিসংখ্যানে ১২ হাজার বলা হলেও বাংলাদেশে খাসিয়াদের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি বলে দাবি করেছে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল। খ্রিস্টান মিশনারীদের অবদানে শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়েছে খাসিয়া সম্প্রদায়।

খাসিয়া জাতিগোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ধূমকেতু ডটকমকে জানান, বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল ও ভারতের আসামসহ কয়েকটি রাজ্যে খাসিয়া জনগোষ্ঠী বাস করে। তাদের প্রধান আবাসস্থল উত্তর-পূর্ব ভারত। তবে পার্বত্য খাসিয়াদের বাসভূমি পশ্চিমে গারো পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে তারা নেমে এসেছিল চেরাপুঞ্জি ও শিলং খাসিয়া অঞ্চলে। বাংলাদেশে খাসিয়াদের বসবাস মূলত সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া উপজেলায় এবং সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারা বাজার ও সদর উপজেলায় তাদের বসবাস।

বিবাহ ও পরিবারের ধরন:

কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং ধূমকেতু ডটকমকে জানান, খাসিয়া সমাজ মূলত মাতৃতান্ত্রিক। সব সম্পদের মালিক হন মেয়েরা। সম্পত্তিতে পুরুষদের আইনগত অধিকার থাকে না। সন্তানেরা মায়ের পদবী গ্রহণ করে থাকে এবং এই কারণে সম্পত্তিতে নারীরদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কনে বিয়ে করে বর নিয়ে আসেন নিজ বাড়ীতে। পুরুষদের বিয়ে হলে তারা গিয়ে ওঠেন শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ স্ত্রীর বাড়িতে। তারা বাড়ির কাজে ও পানের জুমে কাজ করে পরিবারকে সহায়তা করেন। স্ত্রীর বাড়িতে পুরুষরা কাটিয়ে দেন জীবনের বাকি দিনগুলো। আর নারীরা নিজেদের বাড়িতেই পিতা মাতার সঙ্গে স্বামী-সন্তানসহ বসবাস করে থাকেন। খাসিয়া সম্প্রদায়ে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ থাকায় তাদের অধিকাংশ বিয়ে হয় প্রেম-ভালোবাসার মাধ্যমে।

পরিবারের কর্তা মা হলেও গোষ্ঠী বা বংশের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হলেন মামা। তবে পরিবারের সাধারণ বিষয়ে নারীদের মতামত নেওয়া হয়। বাংলাদেশে পারিবারিক ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরাই পরিবারের কর্তা হিসেবে ভূমিকা রাখে। ঐতিহ্যগতভাবে খাসিয়াদের অর্থনীতি পরিবার বা বংশের নিয়ন্ত্রণাধীনে থেকে যে কাউকে দিতে পারে। সে নিজের জন্য অথবা বোনের জন্য অথবা ছেলেমেয়েদের জন্য ব্যয় করতে পারে। অবিবাহিত পুরুষরা মা-বাবার জন্য আয় রোজগার করে।

বাংলাদেশের খাসিরা সাধারণত একটি পুঞ্জিতে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। এক্ষেত্রে তাদের পবিবার কাঠামো ছিল প্রধানত যৌথ পরিবারই। কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। বিবাহের পর বাবার বাড়ি বা শ্বশুর বাড়িতে না গিয়ে নতুন বাড়িতে ওঠে। পুঞ্জিতে যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব থাকলেও এখন একক পরিবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

খাসিয়া সমাজের একই গোত্র বা বংশের মধ্যে বিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একই গোত্রের বিবাহকে সমাজে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিবাহযোগ্য সম্ভাব্য ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে অভিভাবকরা অবগত হলে পাত্রের অভিভাবক এবং আত্মীয়স্বজনরা পাত্রীর অভিভাবকদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায়। তবে প্রস্তাবের আগে ধর্মীয় আচার, রীতিনীতি, গোত্রীয় সম্পর্ক ও সামাজিক ভালমন্দ যাচাই করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রস্তাব অনুসারে বাগদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বাগদানের পর বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিয়ের কাজ সম্পাদিত হয়।

বিয়ে সম্পাদনের জন্য উভয় পক্ষের জন্য মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন। মধ্যস্থতাকারীগণই বর ও কনের পক্ষে বিবাহ মঞ্চে ওকালতি করে। ধর্মীয় কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই জনসম্মুখে প্রচার করা হয়। তারপর বিয়ের ভোজ পরিবেশিত হয়। এলাকা ভেদে বিয়ের রীতি নীতি ভিন্ন হতে পারে। বর্তমানে অধিকাংশ খাসিয়া খিস্ট্রধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাদের বিবাহ ব্যবস্থায় পাশ্চাত্যের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আগেকার বিবাহ সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী কোথায় থাকবে তা আগেই ঠিকঠাক করা হয়। খাসিদের মাতৃসূত্রীয় সমাজে পুরুষ বউ নিয়ে হুট করে মায়ের ঘরে উঠতে পারে না। তবে বিয়ের পরে স্ত্রী তার মায়ের ঘরে থাকলেও তা মেনে নেওয়া হয়। বিবাহের পর স্বামী স্ত্রী নতুন ঘরবাড়ি করে সংসার করতে হয়। তবে সর্বকনিষ্ঠা কন্যার বর-এর অনেক ক্ষেত্রেই ঘর জামাই হওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো সন্তান সন্ততি না হলে, পুরুষের অত্যাচার, নির্যাতন, মদ্যপান, ব্যভিচার ইত্যাদি কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে।

অর্থনৈতিক অবস্থা:

খাসিয়া নেতা অরিজিন খংলা ধূমকেতু ডটকমকে জানান, খাসিয়াদের অর্থনীতি মূলত পান চাষ এবং কৃষি কাজকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। চাকুরিজীবীর সংখ্যা বাড়লেও তারা আজ ভূমি হারানোর শিকার। তাদের প্রায় ৭০ শতাংশ লোক পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে বন ও ভূমির উপর নির্ভরশীল। চাষাবাদযোগ্য জমি ও বনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাদের  অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সমতল ভূমিতে বসবাসরত খাসিয়ারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে এমন খাসিয়া লোকের সংখ্যা খুবই কম।

অরিজিন খংলা জানান, পাহাড় ও মাটির উপর অধিকাংশ নির্ভরশীলতাই খাসিয়াদের সমস্যাকে আরো জটিল করেছে। সমতল ভূমিতে বসবাসরত খাসিয়ারা স্থায়ী কাগজপত্র নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড়ে কিছু অংশ স্থায়ী কাগজপত্র নিয়ে এবং অনেকেই দখলীয় সরকারি খাস জমিতে, বনবিভাগের বরাদ্দকৃত ও লিজকৃত ভূমিতে বসবাস করছে। উচ্ছেদসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বৈধ কাগজপত্রহীন জমির মালিকেরা। ভূমিহীন খাসিয়াদের অবস্থা আরো করুণ। প্রতিটি গ্রামেই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোক অন্যদের জমিতে শ্রম দিয়ে থাকে। পান চাষ একটি স্থায়ী চাষাবাদ পদ্ধতি। পাহাড়ে বা বনভূমিতে পানের পাশাপাশি সাপোর্টিং ফসল হিসেবে লেবু, কমলালেবু, আনারস, কাঁঠাল, সুপারি ও অন্যান্য ফসল চাষ করা হয়ে থাকে। এ পেশায় ঝুঁকি অনেক এবং বর্তমানে পান বাজার ব্যবস্থা খুবই নাজুক। মধ্যস্বত্ব ভোগী মহাজনগণ ইচ্ছামতো লাভের সিংহভাগ নিয়ে থাকে। অনেকে পান চাষের প্রারম্ভে মহাজনের কাছে থেকে আগাম টাকা গ্রহণ করে। ফলে মহাজনগণ ইচ্ছামত দাম দিয়ে পান ক্রয় করে লাভে বিক্রয় করে। পানচাষিরাও এ মহাজন শ্রেণীর কাছে পুরোপুরি জিম্মি। বর্তমানে তারা এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চাকুরিজীবীদের অনেকেই সমতল এলাকায় বৈধ জমি ক্রয় করছে, গড়ে তুলছে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ধরনের ব্যবসাকেন্দ্র।

ধর্ম:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মেগাটিলা খাসিপুঞ্জির মন্ত্রী (প্রধান) মনিকা খংলা ধূমকেতু ডটকমকে জানান, খাসিয়াদের ধর্ম অতি প্রাচীন। তারা আগে বিভিন্ন দেবতার পূজা করতো। তবে বর্তমানে অধিকাংশ খাশিয়াই খ্রীষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। তাই তারা এখন বড়দিনসহ খ্রীষ্টানদের নানা ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব পালন করে। তাদের বিশ্বাস ‘উব্লাই নাথউ’-ই পৃথিবী সৃষ্টিকারী আদি দেবতা।

পুঞ্জিপ্রধান বা মন্ত্রী:

খাসিয়া নেতা অরিজিন খংলা জানান, খাসিয়া সম্প্রদায় দলবন্ধভাবে বাস করে। তারা যেসব পাহাড়ি এলাকায় দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, সেই গ্রামগুলোকে পুঞ্জি বলে। সাধারণত লোকালয় থেকে দূরে পাহাড়ি টিলায় এসব পুঞ্জি গড়ে ওঠে। পুঞ্জিতে বসবাসকারী খাসিয়াদের একজন পুঞ্জিপ্রধান থাকে। তাকে মন্ত্রী বলা হয়। মৌলভীবাজার জেলায় খাসিয়াপুঞ্জির সংখ্যা কম-বেশি ৫৫টি। এই পুঞ্জিতে বসবাস করে দেড় হাজার খাসিয়া পরিবার। বৃহত্তর সিলেটে এই সম্প্রদায়ের ৭২টি পুঞ্জি আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বসবাস জাফলং এলাকায়। বর্তমানে জাফলংয়ে চারটি পুঞ্জি রয়েছে। জৈন্তায় রয়েছে আরও দুটি পুঞ্জি। প্রতিটি পুঞ্জিতে গড়ে ৫০টি পরিবার বাস করে।

সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান

কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, গান, কবিতা থেকে শুরু করে নাচ, নাটক, গল্প, শিল্প-সাহিত্যের সব শাখাই খাসিয়াদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। লোককথা, পৌরাণিক কাহিনী, তন্ত্র-মন্ত্র খাসিয়া সংস্কৃতির জীবনবোধে সমৃদ্ধ। খাসিয়াদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। নৃত্য-সংগীত তাদের খুবই প্রিয়। নানা ধরণের নাচগানে সবাই একত্র হয়। সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত খাসিয়াদের প্রায় ৮০ শতাংশই খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত। তাই বড়দিন ও ইস্টার সানডে পালিত হয় জোরেশোরে। তাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। নিজেদের ঐতিহ্যময় কৃষ্টি আর সংস্কৃতি চর্চায় হাসি-আনন্দে পুরাতন দিনগুলোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে আহ্বান করে এই জনগোষ্ঠী।

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে খাসিয়ারা ২৩ নভেম্বর খাসিয়া বর্ষবিদায় “খাসি সেঙ কুটস্যাম” উদযাপন করে আসছে। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় খাসিয়া বর্ষবরণ (স্ন্যাম থাইমি)। এই দিনটি খাসিয়া সম্প্রদায়ের জন্য খুবই আনন্দের। অনুষ্ঠান দেখতে বাইরে থেকেও আসেন অনেক অতিথি ও পর্যটক।

ভাষা:

খাসিয়া সোস্যাল কাউন্সিলের সেক্রেটারী এলিসন সুরং ধূমকেতু ডটকমকে জানান, খাসিয়া ভাষা খুবই সমৃদ্ধ, কিন্তু ভৌগোলিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা ও প্রশাসনিক অনেক কারণে প্রচুর বাংলা শব্দ খাসিয়া ভাষায় অবিকৃত অবস্থায়, অথবা আংশিক পরিবর্তিত হয়ে প্রবেশ করেছে। তা এখনো জারি আছে। অন্য ভাষার মতো খাসিয়া ভাষা অঞ্চলেও কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। অঞ্চলভেদ বিচার করে খাসিয়া ভাষাকে প্রধান চারটি ভাষা অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে ওয়ার (কুলাউড়া অঞ্চলের খাসি ভাষা), প্লারর (ভারতের মেঘালয়ে ও সিলেটের জৈন্তিয়ায় বসবাসকারীদের ভাষা), আমজলং (মৌলভীবাজারে প্রচলিত খাসি ভাষা) এবং নংউয়া (সুনামগঞ্জে প্রচলিত খাসিয়া ভাষা)। খাসিয়া ভাষা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এক সময় খাসিয়া ভাষা বাংলা হরফে লিখিত হতো। বাংলা অক্ষরে বাইবেলের কিছু অংশ খাসিয়া ভাষায় প্রথম অনূদিত হয়েছিল। বর্তমানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খ্রীস্টান মিশনারিদের প্রচেষ্টায় রোমান অক্ষরে চেরাপুঞ্জি ও এতদঅঞ্চলের খাসিয়া ভাষা লিখিত হচ্ছে।

পোশাক-খাদ্য:

খাসিয়া নেতা অরিজিন খংলা জানান,আধুনিকতার স্রোত আর প্রযুক্তির জ্ঞানের প্রসারে খাসিদের  পোশাক ও খাদ্যাভাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। খাসিয়া মেয়েরা ‘কাজিম পিন’ নামক ব্লাউজ ও লুঙ্গি পরে। আর ছেলেরা পকেট ছাড়া জামা ও লুঙ্গি পরে, যার নাম ‘ফুংগ মারুং’। ঐতিহ্যবাহী খাসিয়া পোশাক ধারা, সা, ফংয়ের পরিবর্তে তারা এখন প্যান্ট, শার্ট, কোর্টেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এসেছে খাদ্যতালিকাতেও পরিবর্তন। খাসিয়াদের নিজস্ব খাবার জাঙ, পমের পরিবর্তে এখন তারা নাস্তা করে চা-বিস্কুট দিয়ে।  খাবারের অন্য সব মেন্যুতে বাঙালী খাবারের সঙ্গে অমিল নেই। পুরোপুরি খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ফলে তাদের জীবনে ইউরোপীয় জীবনধারা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। খাসিয়াদের পোশাক-পরিচ্ছদ সাধারণত বড় তিন টুকরা নানা বর্ণের কাপড়। এই আবরণ দিয়ে নিজেদের দেহাবরণ করে নেয় খাসিয়া মেয়ে ও নারীরা। পুরুষরা প্রচলিত যে কোনো পোশাকই পরে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *