শৈশব-কৈশোর

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় “বঙ্গবন্ধু সড়ক দুর্ঘটনা সহায়তা তহবিল”

ধূমকেতু ডেস্ক : সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বিশেষ তহবিল গঠন করছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। প্রাথমিকভাবে এ তহবিলের নাম দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু সড়ক দুর্ঘটনা সহায়তা তহবিল।

প্রতি বছর বীমা খাতে মোটর ইন্স্যুরেন্সে যে মুনাফা আসে (আন্ডার রাইটিং প্রফিট) তার কমপক্ষে এক শতাংশ এ তহবিলে জমা হবে।

এছাড়া প্রতিটি সাধারণ বীমা কোম্পানি প্রতি বছর এ ফান্ডে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দেবে। পুরো টাকা ব্যাংকে থাকবে। এ টাকার সুদ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হবে।

আরও পড়ুন: আলোকিত হলো প্রায় দু’হাজার পরিবার

সড়ক দুর্ঘটনায় যারা গুরুতর আহত বা নিহত হন, কিন্তু কোন গাড়ি এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তা খুঁজে পাওয়া যায় না, এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে এ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হবে।

ভারতে সোলাটিয়াম ফান্ড নামে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে এ ধরনের একটি তহবিল আছে। অর্থনীতিবিদরা বললেন, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বীমা খাতের উদ্যোক্তারাও উদ্যোগটিকে ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করলেন।

জানতে চাইলে আইডিআরের সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, দেশে সড়ক দুঘর্টনায় প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ আহত বা নিহত হন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর গাড়ি পালিয়ে যায়। এদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না।

সেক্ষেত্রে এ ফান্ডের তহবিল ব্যবহার হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত, বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আইডিআরের প্রতিনিধি মিলে তহবিল পরিচালনার একটি কমিটি হবে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন আসবে, পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তি করে ১ লাখ অথবা নির্দিষ্ট একটি অংকের টাকা দেয়া হবে।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’র হিসাব অনুসারে ২০১৭ সালে দেশে ২ হাজার ৬৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩৪৯ জন নিহত হয়েছেন। আগের বছর যা ছিল ২ হাজার ৩১৬ জন। অর্থাৎ প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

অপরদিকে আইডিআরের তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালে দেশের মোটর বীমা খাতের গ্রস প্রিমিয়াম এসেছে ৩৪৪ কোটি টাকা। আর নিট প্রিমিয়াম এসেছে ৩২৭ কোটি টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে আন্ডার রাইটিং মুনাফা এসেছে ১০৩ কোটি টাকা।

বিগত বছরের মুনাফার রেশিওর আলোকে ধারণা করা হচ্ছে ২০১৮ সালে তা ১৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এখান থেকে ১ শতাংশ ওই তহবিলে নেয়া হলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হবে। এ টাকায় অনেক পরিবারকে সহায়তার আওতায় আনা যাবে।

অন্যদিকে বর্তমানে দেশে ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি রয়েছে। প্রত্যেক কোম্পানি প্রতি বছর এ তহবিলে কমপক্ষে ১ লাখ দিলেও তহবিলে গঠন করা সম্ভব। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যায় ক্রমে তহবিল বাড়ানো হবে।

ইতিমধ্যে একটি বীমা কোম্পানি থেকে ওই ফান্ডে বছরে ৩ লাখ টাকা অনুদান দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে সরকারিভাবেও তহবিলে টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে- গত বছরের ১১ নভেম্বর আইডিআরের সেন্ট্রাল রেটিং কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। ওই সভায় আইডিআরের সদস্য গকুল চাঁদ দাস বিষয়টি উত্থাপন করেন। সভায় জানানো হয়, অজ্ঞাত পরিচয়ের (আন-আইডেন্টিফাইড) গাড়ির মাধ্যমে প্রতি বছর দেশে সড়ক ও মহাসড়কে অনেক মানুষ আহত কিংবা নিহত হন।

দুর্ঘটনার পর গাড়িগুলো দ্রুত পালিয়ে যায় (হিট অ্যান্ড রান)। পরে এসব গাড়ি চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বা তার পরিবার কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পান না। কিন্তু ওই গাড়িটি কোনো না কোনো কোম্পানিতে বীমা করা। কারণ বীমা ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানো যায় না। এ কারণে বীমা কোম্পানিগুলোকে এর দায় নিতে হবে।

সভায় জানানো হয়, ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিক্যাল অ্যাক্টের আওতায় ভারত সরকার সোলাটিয়াম ফান্ড নামে বিশেষ তহবিল গঠন করে। এ তহবিল থেকে এ ধরনের ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ২৫ হাজার ভারতীয় রুপি দেয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও গুরুতর আহতের ক্ষেত্রে ১২ হাজার ৫০০ রুপি বা ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়।

কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এ তহবিল সংগ্রহ করে। এর আদলে বাংলাদেশেও এ ধরনের তহবিল করা যায়। আইডিআরের পরবর্তী সভায় বিষয়টি অনুমোদন হলে একটি রূপরেখা তৈরি হবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১০ মার্চ বিষয়টি নিয়ে সভা হচ্ছে। ওই সভায় একটি রূপরেখা তৈরি হতে পারে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটি ইতিবাচক। সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে মানুষ উপকার পাবে। তার মতে, দেশে বীমা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

ফলে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনও আমরা জানি না। তবে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলে বিস্তারিত বোঝা যাবে।

তিনি বলেন, কী পদ্ধতিতে আইডিআরএ করতে চায়, কোম্পানিগুলো কীভাবে টাকা দেবে তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। তবে তারমতে, কোম্পানির সিএসআর তহবিল থেকে এটি করা যায়। এক্ষেত্রে শুধু বীমা কোম্পানি নয়, অন্যান্য কোম্পানিও অংশ নিতে পারে। এটি ভালো কাজ। তবে এর চেয়ে কোন গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটাল, সবার আগে তা চিহ্নিত করা জরুরি।

মেঘনা ও কর্ণফুলী ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। আমরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। ক্ষতিগ্রস্তদের যে পরিমাণ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হবে তা যেন বীমা খাতের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকটি নিশ্চিত করতে হবে। এমন কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা ঠিক হবে না যা বীমা খাতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। খবর : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *